দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিপুল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রাখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বর্তমান সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০৩০ সাল নাগাদ ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির লক্ষ্য স্থির হয়েছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ যেমন আকৃষ্ট হবে, তেমনি দেশের এক কোটিরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। পরিকল্পিত শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, উৎপাদন এবং রপ্তানি বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণে উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন-২০১০-এর আওতায় বেজা প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের দ্বার উন্মোচন করতে বেজা এরই মধ্যে আটটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে শিল্প স্থাপনের উপযুক্ত করেছে। আগামী ৫০ বছরে যাতে ভূমি অপ্রতুলতার কারণে শিল্প বিকাশ বাধাগ্রস্ত না হয় সে লক্ষ্যে বেজা ভূমি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের এই ইতিবাচক কার্যক্রমে দেশ ও বিদেশের অনেক উদ্যোক্তা অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কয়েকজন তাঁদের শিল্প ইউনিটের নির্মাণকাজ শুরু করেছেন।
কিন্তু বাংলাদেশে যেকোনো শুভ উদ্যোগ নানা কারণে বাধাগ্রস্ত হয়। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে গিয়ে সরকারি দপ্তরে পদে পদে হয়রানি ও ভোগান্তির কথা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যবসা-বাণিজ্য বিকাশের ক্ষেত্রে সরকারের ঘন ঘন নীতি-কৌশল পরিবর্তনই সবচেয়ে বড় বাধা। কারণ হচ্ছে, বারবার নীতি-কৌশল পরিবর্তন করলে ব্যবসায়ীদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়। তাঁরা বিনিয়োগে আগ্রহ হারান। বিশ্বের যেকোনো দেশেই বিনিয়োগ টানতে যখন দেশি বিনিয়োগকারীদের সন্তুষ্ট করা হয়, তখন বাংলাদেশে ঘটে বিপরীত ঘটনা। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাবও পেয়েছে। কিন্তু স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা বলছেন, ঘন ঘন নীতি-কৌশল পরিবর্তনের কারণে তাঁরা আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছেন। ভ্যাট নিয়ে বেজার কাছ থেকে নতুন একটি চিঠি পাওয়ার পর তাঁদের মনোবল ভেঙে গেছে। জমির মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপিত হলে ব্যবসার খরচ বেড়ে যাবে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, একদিকে ব্যাংকঋণ পাওয়া কঠিন, অন্যদিকে নতুন শঙ্কা তৈরি করেছে সরকারের শুল্ক ও ভ্যাট নীতি থেকে সরে আসা। এর ফলে অর্থনৈতিক অঞ্চলে তাঁদের বিনিয়োগ হুমকিতে পড়ল। অর্থনৈতিক অঞ্চলে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী তারল্য সংকটে ভুগছেন।
কভিড-১৯ সংকট বিদেশি বিনিয়োগ টানার ক্ষেত্রে আমাদের জন্য দারুণ সুযোগ নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ যদি এ সুযোগ কাজে লাগাতে না পারে, তাহলে শিল্পায়নে অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে পড়বে। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।