১৯৭১ সালে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নেওয়া বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানো। স্বাধীনতার ৪৮ বছরে এসে বাংলাদেশ শুধু ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠেই দাঁড়ায়নি, রীতিমতো ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মডেল। গত পাঁচ বছরে মাথাপিছু আয়, মোট দেশজ উৎপাদন বেড়েছে। শিল্পে অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নেও যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। যে পাকিস্তানের সঙ্গে লড়াই করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, সেই পাকিস্তানের চেয়ে আজ সব খাতে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। উন্নয়নে বাংলাদেশের অদম্য গতি দেখে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘সব কিছুতেই আজ বাংলাদেশ আমাদের চেয়ে এগিয়ে গেছে।’ শুধু ইমরান খান নন, পাকিস্তানের অনেক বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী ও অর্থনীতি বিশ্লেষক বাংলাদেশের এই উন্নয়নের প্রশংসা করেন। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হ্রাস, সামাজিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশ আজ অনেক এগিয়ে গেছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈশ্বিক লিঙ্গবৈষম্য বিষয়ক সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, ছেলে ও মেয়েশিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তি, মাধ্যমিকে ছেলে ও মেয়েদের সমতা এবং সরকারপ্রধান হিসেবে কত সময় ধরে একজন নারী রয়েছেন এই তিন ক্ষেত্র এবং জন্মের সময় ছেলে ও মেয়েশিশুর সংখ্যাগত সমতার ক্ষেত্রেও বিশ্বের সব দেশের ওপরে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সাালের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্টে বলা হচ্ছে, নারী-পুরুষের সমতার দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের ওপরে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে সার্বিক বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৮তম। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯১তম।
নারী-পুরুষের সমতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এই এগিয়ে যাওয়ার পেছনের রহস্য কী? এখানে মেয়েদের শিক্ষা এগিয়ে নিতে উপবৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। নারীশিক্ষার প্রভাব পড়েছে সর্বত্র। বাল্যবিয়ে কমে এসেছে। কিশোরীরাই বাল্যবিয়ে বন্ধে উদ্যোগী হচ্ছে। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নেও অগ্রগতি হয়েছে নারীর। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে যেসব দেশে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন সবচেয়ে বেশি হয়েছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এই সূচকে বাংলাদেশ প্রায় অর্ধেক বৈষম্য কমিয়ে এনেছে। সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের দিক থেকে বাংলাদেশ ৮০তম এবং নারী মন্ত্রীর সংখ্যার দিক থেকে ১২৬তম। নারী সরকারপ্রধানের দিক থেকে বিশ্বসেরা হয়েছে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের আজকের যে অবস্থান, তা আমাদের আশাবাদী করে তোলে। এই অবস্থান ধরে রাখাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ে তোলা গেলে বাংলাদেশ একদিন বিশ্বের বিস্ময় হবে, এমন আশা করা যায়। দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশ শুধু নয়, বিশ্বের সব দেশের জন্যই বাংলাদেশ সব ক্ষেত্রে রোল মডেল হবে। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হবে।