কাজিরবাজার ডেস্ক :
জঙ্গি সংগঠন আল্লাহর দল বা আল্লাহর সরকারের মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে র্যাব। তারা জানিয়েছে, এদের সদস্য সংখ্যা ব্যাপক। গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত রয়েছে সদস্য।
বুধবার ভোরে রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে করে জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল বা আল্লাহর সরকারে’ চার সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। দুপুরে কারওয়ানবাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্র্নেল সারওয়ার-বিন কাশেম।
আল্লাহর দলকে নিয়ে কেন উদ্বেগ, তাও স্পষ্ট করেন কাশেম। বলেন, ‘তাদের মতো এত ঐক্য অন্য কোন জঙ্গি সংগঠনে দেখা যায়নি। সংগঠনটির বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান চিহিৃত করা হয়েছে। যে আয়ের উৎস দিয়ে তারা নাশকতা করতে অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা করছিল।’
গ্রেফতার চার সন্দেহভাজন জঙ্গি হলেন সংগঠনটির ‘যুগ্ম-অধিনায়ক’ সিরাজুল ইসলাম সেহেরুল মৃধা, ‘উপ-অধিনায়ক’ নিরুজ্জামান মনির, ‘জেলা নায়ক’ এসএম হাফিজুর রহমান সাগর ও ‘আঞ্চলিক নায়ক’ শফিউল মোযনাবীন তুরিন। উদ্ধার করা হয়েছে তিনটি পেনড্রাইভ, ১২টি মোবাইল ফোন, সংগঠনের লিফলেট, দাওয়াতপত্র ও আয়-ব্যয়ের হিসাব সম্বলিত টালি খাতা।
সারওয়ার-বিন কাশেম বলেন, “জঙ্গি সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মতিন মেহেদী প্রথমে আল্লাহর দল গড়ে তুললেও পরে জেএমবির সঙ্গে জড়িয়ে বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালায়। তাদের মধ্যে ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের সংগঠনের মূল্য লক্ষ্যে লেখা আছে, ‘আমরা আমাদের ঐক্য চালিয়ে যাব, যেকোন মুহূর্তে সুযোগ পেলে বর্তমান শাসন ব্যবস্থাকে উৎখাত করার চেষ্টা করব’।”
‘জঙ্গি সংগঠনটির মোটা অঙ্কের টাকার অনেকগুলো ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। গ্রাম পর্যায় থেকে তারা দীর্ঘদিন ধরে টাকা সংগ্রহ করছে। ফেসবুকের মাধ্যমে মানুষকে উৎসাহিত করে টাকা সংগ্রহ করেছে। এসব টাকা দিয়ে তারা অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা করছিল। কিন্তু লাইন না পাওয়ায় সফল হতে পারেনি। সম্প্রতিক সময়ে অনেকে গ্রেপ্তারও হয়েছে।’
‘তাদের সদস্য সংখ্যা ব্যাপক কিন্তু সেটা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। চেষ্টা চলছে সদস্য সংখ্যা জানতে।’
১৯৯৫ সালে জঙ্গি মতিন মেহেদী ‘আল্লাহর দল’ নামক জঙ্গি সংগঠনটি গড়ে তোলে। ২০১৪ সালে মতিন মেহেদীর গোপন নির্দেশে এটি ‘আল্লাহর সরকার’ নাম করণ করা হয়। এই সংগঠনটি গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের সংবিধানে বিশ্বাসী নয়। তাদের মূল লক্ষ্য অনুকূল পরিবেশে দেশের মধ্যে ব্যাপক নাশকতায় লিপ্ত হয়ে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করা। তারা সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সর্বোচ্চ পদকে ‘তারকা’ হিসেবে চিহ্নিত করে। এছাড়া কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত¦পূর্ণ পদে পর্যায়ক্রমে রয়েছে অধিনায়ক, অতিরিক্ত অধিনায়ক, উপ-অধিনায়ক, যুগ্ম অধিনায়ক, সহ অধিনায়ক, নিয়ন্ত্রক, নির্বাহী। এছাড়া আঞ্চলিক কাঠামোতে রয়েছে বিভাগীয় নায়ক, জেলা নায়ক, থানা নায়ক, গ্রাম নায়ক এবং সদস্য।’
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা মনে করে বর্তমানে যুদ্ধাবস্থা চলছে বিধায় তারা ঈদ, কোরবানি, হজ্ব ইত্যাদি পালন করে না। জুমার নামাজ আদায় করে না এবং প্রতি ওয়াক্তের শুধুমাত্র দুই রাকাত নামাজ আদায় করে।… আমরা সংগঠনটির বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে সেগুলো নাম বলছি না।’