রাজনৈতিতে নারীর অংশগ্রহণ

76

স্বাধীনতা অর্জনের পর ৪৭ বছরে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন-অগ্রগতি হয়েছে, তবে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হয়নি। পরিবর্তনের এই ধীরগতির মূল কারণ রাজনৈতিক। রাষ্ট্রের মৌলিক বিষয়গুলোর ব্যাপারে রাজনৈতিক অনৈক্য এখনো বিদ্যমান। মত-পথের ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও কিছু বিষয়ে ঐক্য আবশ্যক—এ কথা দলগুলো এখনো স্বীকার করতে পারছে না। তার পরও বাংলাদেশ উন্নয়নের অনেক সূচকে আশপাশের অনেক দেশ থেকে এগিয়ে রয়েছে। নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন এসব সূচকের একটি। নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন মধ্য আশির পর উল্লেখযোগ্য হারে ঘটেছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে এবং তা বর্ধমান। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নও বাড়ছে, তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে বাড়ার মাত্রার চেয়ে অনেক কম। সংসদে, রাষ্ট্রে ও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ পদে নারী থাকা সত্ত্বেও দলের ও রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা খুবই কম।
নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়টুকু বাদ দিলে ক্ষমতায় রয়েছেন নারীরা। বর্তমানে জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং বিরোধীদলীয় নেতাও নারী। তার পরও সংসদে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব সীমিত। সংরক্ষিত আসনে ৫০ জন নারী রয়েছেন, এর বাইরে সংসদে নারীর সরাসরি প্রতিনিধিত্ব ৪৭ বছরে তেমন বাড়েনি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে ২০২০ সালের মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সব ধরনের কমিটিতে ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার বিধান মানার চেষ্টা অনেক দলেরই নেই। প্রধান দলগুলোও মানছে না। সংসদের সদস্য হওয়ার জন্য সরাসরি নির্বাচনী লড়াইয়ে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে, তবে মোট প্রার্থীসংখ্যার তুলনায় তা এখনো মামুলি।
সংখ্যার বিচারে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। কিন্তু তুলনামূলক বিচারে (মোট প্রার্থীর তুলনায়) তা উল্লেখযোগ্য নয়। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন যদি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ঘটাতে হয়, তাহলে এ অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। এর জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির বদল দরকার।