আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মনোনীত প্রার্থী চূড়ান্ত করতে শুরু করেছে। নিজেদের জন্য ২৪০ আসন রেখে জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্য ছয় শরিক দলের ১৬ প্রার্থীকে নৌকার চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টির সঙ্গেও আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অন্যদিকে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনের মাঠে প্রার্থীদের পদচারণা শুরু হবে। ওদিকে দলের অভ্যন্তরে চলছে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ। এবারের নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো কী প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে আসতে চায়, তা স্পষ্ট হবে নির্বাচনী ইশতেহারে। নির্বাচনী ইশতেহারে অংশীজনদের চাওয়া নিয়ে গণমাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হচ্ছে। নির্বাচনী এলাকাগুলোতে এরই মধ্যে দল ও প্রার্থীদের পক্ষ থেকে কর্মী-সমর্থকদের সংগঠিত করার কাজও এগিয়ে রাখা হচ্ছে। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই পুরোদমে শুরু হবে প্রচারাভিযান। দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রাথমিক বাছাইয়ে বাতিল হয়ে যাওয়া প্রার্থীদের আপিলও চলছে। অনেকেই আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। অনেককে হতাশও হতে হয়েছে। আবার নির্বাচনী উত্তেজনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটতে শুরু করেছে। ঘটেছে হতাহতের ঘটনাও।
দেশে সব ধরনের নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে হলেও এবারের নির্বাচনে চিত্র একেবারেই ভিন্ন হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি অংশ নেয়নি। এবার বিএনপি যেমন ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, তেমনি দলটি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গেও রয়েছে। এ অবস্থায় দেশের নির্বাচনমুখী রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হতে যাচ্ছে বলে পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। তবে রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই নির্বাচনের মাঠে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার আগেই উত্তেজনা চড়তে শুরু করেছে। গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোই বলে দিচ্ছে, অনেকেরই ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের পাশাপাশি কর্মী-সমর্থকদের বুঝতে হবে, কোনোভাবেই নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করা যাবে না। সব দলের অংশগ্রহণে এবার একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে যাচ্ছে। দেশের মানুষের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলও এ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। কাজেই নির্বাচন অর্থবহ করে তোলার দায়িত্ব সবার। নির্বাচন কমিশন যেমন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে সেসব এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবস্থা নেবে, তেমনি প্রশাসনও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চললে পরিবেশ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনুকূলে থাকবে। আমরা আশা করি, ভোটের দিন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।