একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ৩০০ আসনে এবার মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন তিন হাজার ৬৫ জন। গত রবিবার বাছাই শেষে দেখা গেছে, ৭৮৬ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী বাদ পড়েছেন। ভোট থেকে ছিটকে যাওয়াদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কয়েক ডজন নামিদামি প্রার্থী রয়েছেন। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী বাছাইয়ে বাদ পড়া প্রার্থীরা তিন দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন। ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে সেসব আপিল নিষ্পত্তি করা হবে। মনোনয়নপত্র বাতিলের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। খালেদা জিয়াসহ বিএনপির অর্ধশতাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে নির্বাচন কমিশনকে ‘পুতুলনাচের’ আসরের সঙ্গে তুলনা করেছেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্তকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেছেন।
মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই নির্বাচনী প্রক্রিয়ারই একটি অংশ। যেকোনো নির্বাচনেই মনোনয়নপত্র পূরণ করা থেকে শুরু করে ভোটগ্রহণের দিন পর্যন্ত অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলতে হয়। নির্বাচনী বিধি মেনে চলা সব প্রার্থীর কর্তব্য। সব শর্ত পূরণ করা হয়েছে কি না, তা অবশ্যই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে পরীক্ষা করে দেখা দরকার। এই দায়িত্ব প্রার্থীদের। প্রার্থীরা সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন কি না, সেটাই এখন বিবেচনার বিষয়। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পেছনে যেসব কারণ জানা যাচ্ছে, তার মধ্যে আছে খেলাপি ঋণ, বিলখেলাপি, হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকা। এ ছাড়া প্রত্যয়নপত্রের স্বাক্ষর সঠিক কি না, এমন সন্দেহেও মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। কোনো কোনো প্রার্থী তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র দেননি। কোনো কোনো প্রার্থীর মনোনয়নপত্রে দেওয়া শিক্ষাগত যোগ্যতার বিবরণের সঙ্গে শিক্ষা সনদের মিল নেই। আবার মনোনয়নপত্রে আসনের মোট ভোটারের ১ শতাংশের স্বাক্ষর থাকার কথা থাকলেও অনেক মনোনয়নপত্রে তা পাওয়া যায়নি। আবার অনেকের ভোটারের তালিকায় মৃত ব্যক্তির স্বাক্ষর পাওয়া গেছে। আয়কর সনদ না থাকার কারণেও অনেকের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে শুধু নয়, দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার আগেই মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীদের বিধিগুলো ঠিকমতো দেখে সব শর্ত পূরণ করা প্রয়োজন ছিল।
প্রার্থীরা এখন নিজ নিজ রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে বাতিল আদেশের সার্টিফায়েড কপি সংগ্রহ করে নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন। এই আপিলের সুযোগ পাচ্ছেন প্রার্থীরা। এর পর নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়ে আদালতে যাওয়ার সুযোগও থাকছে। বিষয়টি নিয়ে অযথা জল ঘোলা করার সুযোগ নেই। নির্বাচনী বিধি মেনেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে বলে আমরা মনে করি। আশা করব, বিধি মেনেই সব জটিলতা দূর করা হবে।