হাওলাদার আউট হওয়ার নেপথ্যে!

71

আবার ভোটের আগে জাতীয় পার্টিতে নাটকীয়তা। মহাজোটে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আসন ছাড় নিয়ে দলের মধ্যে ক্ষোভের মধ্যেই হঠাৎ সরিয়ে দেওয়া হলো মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে। কেন এই সিদ্ধান্ত, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

নেতারা নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে চাইছেন না, তবে নাম গোপন রেখে একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার মনোনয়ন নিশ্চিত না হওয়া, মনোনয়ন দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে অর্থের লেনদেন এর কারণ।

২০১৪ সালে ঢাকা-১ আসনে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে ভোটে জেতা জাতীয় পার্টির নেত্রী সালমা ইসলাম এবার মহাজোটের হয়ে প্রার্থী হওয়ার আশা করছিলেন। তবে সেখানে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানকে। আর সালমা নিজ দলের মনোনয়ন না পেয়ে প্রার্থী হয়েছেন স্বতন্ত্র হিসেবে।

গত নির্বাচনে ছাড় পাওয়া পটুয়াখালী-১ আসনটি নিজের জন্য নিশ্চিত করতে পারেননি হাওলাদার। আর খেলাপি ঋণের কারণে সেখানে তার মনোনয়নপত্রও বাতিল হয়েছে। পরদিন হাওলাদারকে মহাসচিবের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে দলের সভাপতিম-লীর সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গাকে নতুন মহাসচিব নিয়োগ দেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

জাপার নেতারা জানান, বিএনপি ভোটে না এলে জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনেই নির্বাচন করবে বলে গত কয়েক বছর ধরে ঘোষণা দিয়ে আসছিল। আর বিএনপির ভোটে আসার বিষয়টি অনিশ্চিত থাকায় জাতীয় পার্টিতে ভোটে আগ্রহী নেতার সংখ্যাই ছিল বেশি। আর বিভিন্ন আসনে মনোনয়নের কথা বলে টাকা নেওয়ার অভিযোগ প্রকাশ্যেই করছিলেন বহু নেতা। তাদের অভিযোগ, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে যোগ্য, অযোগ্য বিবেচনায় না নিয়ে অনেককে মনোনয়নের চিঠি পাঠিয়েছেন।

সম্প্রতি বনানী কার্যালয়ে মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করতে গিয়ে এ নিয়ে তোপের মুখে পড়েন হাওলাদার। পরে রাতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৪৭ আসনে প্রার্থিতার কথা জানানো হয়।

আবার হাওলাদার যাদের নাম ঘোষণা করেছেন, তাদের জন্য আসন নিশ্চিত করতেও ব্যর্থ হন। জাতীয় পার্টি কয়টি আসনে ছাড় পেতে যাচ্ছে, এই বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশায় দল।

জাপার সভাপতিম-লীর সদস্য দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘মনোনয়ন-বাণিজ্যসহ নানা বিষয়ে ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। দলের অনেক নেতাকর্মী তো বটেই, তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সরকারও তার ওপর নাখোশ ছিল। সব মিলিয়েই তার এমন পরিণতি হয়েছে।’

নির্বাচনের মৌসুমে গুরুত্বপূর্ণ পদে এমন রদবদল প্রসঙ্গে জাপার এই নেতা বলেন, ‘আজ বাদে কাল নির্বাচন। এমন সময়ে এ সিদ্ধান্ত দলের জন্য কতটা ভালো বা খারাপ হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।’

সভাপতিম-লীর আরেক সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, ‘হাওলাদারকে পদচ্যুত করার বিষয়ে আগে থেকে কিছু জানতাম না। সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়ার পরে জেনেছি। ঘটনার পরে এ বিষয়ে দলের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। তবে কথা বলতে পারিনি। কী কারণে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো, তা তিনিই (এরশাদ) জানেন। তবে মনোনয়ন-বাণিজ্যসংক্রান্ত সাম্প্রতিক ঘটনার জেরেই এটা হতে পারে বলে ধারণা করছি।’

দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, ‘হাওলাদারকে মহাসচিবের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা শুনেছি। তবে এ বিষয়ে আর বেশি কিছু জানি না।’

পদচ্যুত হওয়ার বিষয়ে রুহুল আমিন হাওলাদারের প্রতিক্রিয়া জানতে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

দায়িত্ব পেয়ে বিকেলে রাজধানীর বনানী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন জাপার নতুন মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তে মহাসচিবের দায়িত্ব পেয়েছি। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে সবার সহযোগিতা চাই।’

হাওলাদারকে মহাসচিবের পদ থেকে সরানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঋণ খেলাপের অভিযোগে একজন মহাসচিবের মনোনয়ন বাতিল হওয়া যেকোনো দলের জন্যই অসম্মানজনক। হয়তো এ জন্যই তাকে সরানো হতে পারে।’

সাবেক মহাসচিবের বিরুদ্ধে মনোনয়ন-বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙ্গা বলেন, ‘বিষয়টি আমরা শুনেছি। এ নিয়ে সত্যতা, অসত্যতা ও নানা বক্তব্য আছে। আমরা জানি না তিনি এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন কি না। দলের অনেকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি জড়িত থাকলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দলের সভাপতিম-লীর সদস্যদের নিয়ে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান রাঙ্গা।

হাওলাদার এর আগেও মহাসচিবের পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ২০০২ সালে দলের প্রথম মহাসচিব হন তিনি। পদচ্যুত হন ২০১৪ সালে। ২০১৬ সালে আবারও একই পদে বহাল হন।

হাওলাদারের রাজনৈতিক জীবনের শুরু বিএনপির মাধ্যমে। ১৯৮১ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন তিনি।