আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৭৭ জন। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এই বিপুলসংখ্যক ভোটারের মধ্যে দুই কোটি ৩১ লাখ তিন হাজার, অর্থাৎ প্রায় এক-চতুর্থাংশের কিছু কম নতুন ভোটার, যারা প্রথমবারের মতো ভোট দিতে যাচ্ছে। এটা তাদের জন্য যেমন নতুন অভিজ্ঞতা, তেমনি এই তরুণ ভোটাররাই এবারের নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের নিয়ামক হবে। স্বাভাবিকভাবেই এবারের নির্বাচনে তরুণসমাজের প্রথম ভোটটি নেওয়ার জন্য সব দলের চেষ্টা থাকবে। নির্বাচনে জিততে হলে তরুণদের ভোটের ওপর নির্ভর করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। আধুনিকমনস্ক এই তরুণসমাজের একটি বড় অংশ রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত না হলেও রাজনীতিসচেতন। রাজনীতির ভালো-মন্দ নিয়ে তাদের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। সময়ের উপযোগী করে নিজেদের গড়ে তুলতে সচেষ্ট তরুণরা তাদের আগামী দিনগুলো নিষ্কণ্টক দেখতে চাইবে—এটাই স্বাভাবিক। তাদের জন্য আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে, সে চিত্রটি তারা যেমন নিজেদের মনে এঁকে রেখেছে, তেমনি তাদের নিজস্ব পরিকল্পনাও আছে। সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটবে এবারের নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে। নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা এই তরুণদের কাছে গেছে। গৃহীত তথ্য-উপাত্ত বলছে, তরুণরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। তাদের চেতনায় রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ। সুস্থ গণতান্ত্রিক চর্চা, সুশাসন ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা চায় আজকের তরুণসমাজ। চায় রাজনীতির গুণগত মানের পরিবর্তন। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর এজেন্ডাও যাচাই করে নিতে চায় তরুণরা।
বাংলাদেশে তরুণদের বিভ্রান্ত করার অনেক চেষ্টা অতীতে হয়েছে। এখন আর সে সুযোগ নেই। রাজনৈতিক দলগুলোকে তাই তরুণসমাজকে আকৃষ্ট করতে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি দিতে হবে। নির্বাচনী ইশতেহারে তরুণদের জন্য সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত সুন্দর দেশ গড়ে তোলা ও উন্নয়ন অভিযাত্রা এগিয়ে নিয়ে যেতে তরুণদের কী করে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তা স্পষ্ট করে বলতে হবে। কারণ তরুণদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রশ্ন এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। যে তরুণ প্রজন্মের ভোটে এবার দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে, সেই তরুণদের নিয়ে আমরা আদৌ কি ভেবেছি? তরুণদের কিভাবে জাতীয় উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায়, তা কি তাদের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে? তরুণদের চাওয়া কী, তা কি কখনো জানতে চাওয়া হয়েছে? সবচেয়ে বড় কথা রাজনীতিতে আজকের তরুণসমাজকে কিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে? তবে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে তরুণদেরও সুনির্দিষ্টভাবে ভাবতে হবে, কার দিকে যাবে তারা—উন্নয়ন ও প্রগতির পক্ষে, নাকি এর বিপরীত দিকে। আজকের তরুণ নিশ্চয় সেই ইতিহাস লিখতে চাইবে, যেখানে মুক্ত চেতনার আগামী উজ্জ্বলতর হবে। মুক্তচিন্তা ও দেশ গড়ার কাজে লাগুক নতুন ভোটারের প্রথম ভোট এটাই আমাদের প্রত্যাশা।