দলীয় ও জোটের প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়নের পর নির্বাচনের মূল স্রোত বইতে শুরু করেছে। তবে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ তালিকা পেতে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। যাঁরা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন, তাঁদের কর্মী-সমর্থকরা আনন্দের সাগরে ভাসছে। অনেক নির্বাচনী এলাকায় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে দলীয় মনোনয়ন পেতে যাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। মনোনয়ন পাননি এমন অনেক নেতা অন্য দলে যোগ দিচ্ছেন।
বাংলাদেশে সব নির্বাচনই উৎসবমুখর পরিবেশে হয়ে থাকে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও শঙ্কাহীন ও উৎসবমুখর হবে, এমনটাই আশা করা হচ্ছে। কিন্তু সব রাজনৈতিক দলেই উপদল আছে। রাজনৈতিক নেতাদের নিজস্ব গ্রুপ ও কর্মী-সমর্থক বাহিনী রয়েছে। মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রার্থীরা পূর্ণ উদ্যমে মাঠে নামবেন। কর্মী-সমর্থকরা সব ভুলে প্রার্থীর জন্য ভোট প্রার্থনা করবে। কোথাও কোথাও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটবে। উত্তেজনা ছড়াবে ভোটের মাঠে। নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকে ভোটের ফল প্রকাশের পর পর্যন্ত এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি থাকবে। কিন্তু পরিস্থিতি যেন কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় সেদিকে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। এখন থেকেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা শুরু হবে। এলাকায় মাইকে প্রচার চালানো হবে। বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী অফিস হবে। হাট-বাজারে বিলি করা হবে প্রচারপত্র। সব মিলিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে যাবে ভোটের আমেজ। নির্বাচনমুখী সব কর্মকাণ্ড উৎসবমুখর পরিবেশেই হোক এটাই সবার চাওয়া। কোনো অবস্থায়ই যেন প্রার্থীদের একপক্ষের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে প্রতিপক্ষের কর্মী-সমর্থকদের সংঘাত-সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনাও না ঘটে।
নির্বাচনে পক্ষ-প্রতিপক্ষ থাকবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা যায় প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা হচ্ছে। তুচ্ছ ঘটনায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ছে কোথাও কোথাও। এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কিছু হতে পারে না। কর্মী-সমর্থকরা তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাবে, তাতে কোনো অবস্থায়ই বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। এখন থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাই সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় ভোটের আগে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা এলাকায় ফিরতে শুরু করে। এবারও যে ব্যতিক্রম ঘটবে, তা নয়। পেশিশক্তি দমনের পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্টেটদের ব্রিফ করার সময় এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কোনো ‘বিভ্রান্তিকর বা বিব্রতকর’ পরিস্থিতির মধ্যে পড়লে ধৈর্য, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতার সঙ্গে তা মোকাবেলা করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আমরা আশা করব, নির্বাচনের আগে ও পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। সংশ্লিষ্ট সবাই কঠোরভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে। শঙ্কাহীন, উৎসবমুখর পরিবেশে হোক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।