জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কিংবা পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে বহু আলোচনা-লেখালেখি হচ্ছে। বাস্তবে কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। কোনোভাবেই পরিবেশ ধ্বংসের গতি কমছে না; বরং অনেক ক্ষেত্রে বেড়েই চলেছে। জনসচেতনতায়ও তা কোনো প্রভাব ফেলছে বলে মনে হয় না। পলিথিনে শহরের ড্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিবছর বর্ষায় জলাবদ্ধতা হয়। নিজেরাই কষ্ট করি। অথচ একটু সচেতন হলেই পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার আমরা অনেক কমিয়ে আনতে পারি। কিন্তু তা হচ্ছে না। বৈধ-অবৈধ ইটভাটায় দেশ সয়লাব হয়ে গেছে। বেশির ভাগই কয়লার বদলে কাঠ পুড়িয়ে যাচ্ছে। নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে। মাটির জন্য পাহাড়-টিলা কেটে সমান করা হচ্ছে। বর্ষায় পাহাড়ধসে মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু এসবের কোনোটাকেই রোধ করা যাচ্ছে না। জেলায় জেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয় থাকলেও তাদের কার্যক্রম নেই। বন রক্ষার দায়িত্বে থাকা বন বিভাগের লোকজনই বন ধ্বংসে সহায়তা করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তাহলে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে আমাদের বাঁচাবে কে?
সিলেটে টিলা কাটার ধুম। দিনে যেসব টিলা সুনসান পড়ে থাকে, রাত হলেই সেগুলোতে শুরু হয় কর্মব্যস্ততা। জ্বলে ওঠে বৈদ্যুতিক বাতি। শুরু হয় বহু মানুষের শোরগোল, খন্তি-শাবল-কোদাল চালানোর আওয়াজ। মাটিভর্তি ট্রাকগুলো গোঁ গোঁ আওয়াজ করে ছুটতে থাকে। স্থানীয় পরিবেশ অধিদপ্তর সেগুলোর খবর রাখে না। অবৈধ কাজ হলেও পুলিশ তাদের আটকায় না। এ রকম কাণ্ড সারা দেশে অহরহ ঘটে চললেও সেসব আটকানোর যেন কেউই নেই। আইন লঙ্ঘন করে সরকারি বনের পাশেই গড়ে উঠছে ইটভাটা, বসছে করাতকল কেউ তাতে বাধা দিচ্ছে না। এমনকি অনেক জায়গায় সরকারিভাবেও বন-পাহাড় ধ্বংস করার অভিযোগ রয়েছে।
১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী দেশে পাহাড় হোক, টিলা হোক—সেগুলো কাটা নিষেধ। ২০১০ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু আইনের বাস্তবায়ন যদি না থাকে, তবে এমন আইন করে লাভ কী? আমরা চাই, সিলেটে যারা টিলা কেটেছে, অবিলম্বে সেগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।