সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকল এয়ারলাইন্সকে অবতরণের সুযোগ এবং সিলেট থেকে যুক্তরাজ্যে সরাসরি ফ্লাইটের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন প্রবাসীরা। মঙ্গলবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তারা সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট চালু করে প্রবাসীদের দুর্ভোগ লাঘবে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বৃটিশ বাংলাদেশি ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের এসিসট্যান্ট সেক্রেটারী মোহাম্মদ সামাউন।
লিখিত বক্তব্যে সামাউন বলেন, বৃটিশ বাংলাদেশি ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মকান্ডের পাশাপাশি সিলেটি প্রবাসীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করে। যুক্তরাজ্যে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগই সিলেটি। যারা প্রত্যেকেই সিলেট তথা বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছেন। এ সকল প্রবাসী ছুটিতে এবং বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করতে প্রিয় মাতৃভূমিতে আসতে এবং পুনরায় সিলেট থেকে সরাসরি ফ্লাইটে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে ফিরতে চান। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য দীর্ঘ ১৯ বছরে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রবাসীদের এ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকা স্বত্তেও সিলেটে সবগুলো এয়ারলাইন্স অবতরণ করতে পারে না। বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী সিলেটে এসে রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ শেষ হলে আগামী দু’বছরের মধ্যে সকল এয়ারলাইন্স ওসমানী বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারবে বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন প্রবাসীরা তার সাথে একমত হতে পারছেন না বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, প্রবাসীরা মনে করেন সকল ধরনের সক্ষমতা ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৫০ লক্ষ সিলেটি রয়েছেন। প্রতিদিন আনুমানিক হাজারের মতো সিলেট প্রবাসী ওসমানী বিমানবন্দর হয়ে দেশে আসতে চান। কিন্তু ফ্লাইটের অভাবের কারণে তারা বাধ্য হয়ে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে শাহজালাল বিমানবন্দরে আসেন। এতে নানা রকম ভোগান্তিতে পড়তে হয় প্রবাসীদের। প্রবাসীরা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ বিমানে যাতায়াত করতে আগ্রহী। কিন্তু বিমানের ভাড়া অন্যান্য এয়ারলাইনসের চেয়ে অনেক বেশি হওয়াতে এবং সময়সূচি বিলম্বের কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে অন্য এয়ারলাইন্স ব্যবহার করেন। অন্যদিকে সরকার বলছে বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজের সংখ্যা কম। যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অর্থায়নে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ বিমানের এয়ারবাস ক্রয় করা এবং এটি দিয়েই বাংলাদেশ বিমানের যাত্রা শুরু হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার সুযোগ দিলে শুধুমাত্র সিলেটের প্রবাসীরা অন্তত ১০টি উড়োজাহাজ কিনে দিতে প্রস্তুত আছেন। সামাউন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে। ওসমানী বিমানবন্দরে ২৪ ঘন্টা সার্ভিস শুরু করলে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পর্যটনের ক্ষেত্রে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে সিলেট। এ সকল দাবি-দাওয়া দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে সিলেটি প্রবাসীরা বাংলাদেশ বিমান ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি বলেন, ২০০৬ সালে বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ঢাকার উত্তর বারিধারায় ‘ওয়াইজ আর্নার হাউজিং কমপ্লেক্স প্রজেক্টে’ ফ্ল্যাট পেতে ১৩৩৯ জন প্রবাসী আবেদন করেন। এর মধ্যে ৪৭৬ জন প্রবাসী লটারীর মাধ্যমে ফ্ল্যাট পান। এর জন্য প্রত্যেককে ১৫০০ থেকে ২০০০ ডলার বিনিয়োগ করতে হয়। ২০০৭ সালে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয়ার কথা। এখন পর্যন্ত মালিকানার কোনো কাগজপত্র সরকার বুঝিয়ে দেয়নি। সময় মতো ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিলে ৬০ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে বিনিয়োগ হতো। কিন্তু তা না করে উল্টো বিনিয়োগ ফিরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যা হতাশাব্যঞ্জক।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ সামাউন দ্রুত ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকল এয়ারলাইন্স অবতরণের সুযোগ সৃষ্টি করে প্রবাসীদের দুর্ভোগ লাঘব এবং ‘ওয়াইজ আর্নার হাউজিং কমপ্লেক্স প্রজেক্টে’ প্রবাসীদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয়ার আহবান জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আল হামরা ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান সুহেল কাদির চৌধুরী, যুক্তরাজ্য প্রবাসী ইকবাল বাহার সুহেল, আলফা খাতুন, আমেরিকা প্রবাসী সায়রীন খাতুন, ব্যবসায়ী আব্দুল মুকিত শাহীন ও সাজুয়ান আহমদ। বিজ্ঞপ্তি