মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের মাগুরছড়া পানপুঞ্জিতে নৃ-গোষ্ঠীর (খাসিয়া) বর্ষ বিদায় “ খাসি সেং কুট¯েœম” উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
স্থানীয়ভাবে খাসি বর্ষপুঞ্জি অনুযায়ী ১৫৪তম বর্ষকে বিদায় ও ১৫৫তম বর্ষকে বরণ করা হয়। নিজেদের ঐতিহ্য জীবনযাত্রা, কৃষ্টি আর সংস্কৃতি চর্চার মধ্যদিয়ে বর্ষবরণের মাধ্যমে নতুন বর্ষকে আহ্বান করে নিলো আদিবাসী খাসি জনগোষ্ঠী। অনুষ্ঠানের নাম “সেং কুটস্নেম উৎসব’। অনুষ্ঠানে ছিলো ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, নাচ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর আদিবাসীদের নিজস্ব পণ্যসামগ্রীর মেলা।
শুক্রবার (২৩ নভেম্বর) মাগুরছড়া পুঞ্জিতে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের আয়োজনে দিনব্যাপী এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির হেডম্যান ও বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের সহ-সভাপতি জিডিসন প্রধান সুছিয়াং-এর সভাপতিত্বে এবারের খাসি বর্ষ বিদায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত অষ্টেলিয়ান রাষ্ট্রদূত মিসেস জুলিয়া নিবলেট।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ থানার ওসি আরিফুল হক, বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের চেয়ারম্যান পিডিশন প্রধান সুছিয়াংসহ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন খাসিয়া পুঞ্জির হেডম্যানরা।
বর্ষবরণে মাঠের এক প্রান্তে বাঁশের খুঁটির উপর প্রাকৃতিক পরিবেশে নারিকেল গাছের পাতা দিয়ে ছাউনি দিয়ে আলোচনা সভার মঞ্চ তৈরি করা। মাঠের চারপাশে ছোটবড় মিলিয়ে ৩০টি স্টল নিয়ে মেলা বসে। স্টলগুলো সাজানো হয়েছে খাসি সম্প্রদায়ের প্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন খেলনা,খাদ্য,পোশাক ও মশলার সামগ্রীসহ ইত্যাদী। এতে বৃহত্তর সিলেট বিভাগের ৭০টি খাসিয়া পুঞ্জি থেকে আগত নারী-পুরুষ, শিশু কিশোররা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে এসে এসব স্টল থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় করেন।
উৎসবের মূল আকর্ষণ ছিল ঐতিহ্যবাহী খাসি পোশাক পরে মেয়েদের নাচ-গান, তৈল যুক্ত একটি বাঁশে উঠে উপরে রাখা মুঠোফোন গ্রহণ,পুকুরে বড়শী দিয়ে মাছ শিকার, তীর ধুনক খেলা, গুলতি চালানো, র্যাফেল ড্র। প্রতিটি আয়োজনে বিজয়ীদের জন্য ছিল আকর্ষণীয় পুরস্কার।
খাসি সোশাল কাউন্সিলের তথ্য বিষয়ক সম্পাদক সাজু মাছিয়াং বলেন, ‘এই উৎসবের মাধ্যমে আমাদের বিলুপ্ত প্রায় সংস্কৃতি ও খেলাধূলাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছি। গেল ২০১২ সাল থেকে মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে খাসি বর্ষ বিদায় “খাসি সেং কুট¯েœম” পালন করে আসছি। সিলেট বিভাগের প্রায় ৭৫টি খাসিয়া পুঞ্জির থেকে খাসি নারী পুরুষ, কিশোর-কিশোরীরা এ উৎসবে অংশ নেয়। প্রাকৃতিক পরিবেশে এ আয়োজন সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়।’
মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির হেডম্যান জিডিশন প্রধান সুচিয়াং ও লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির হেডম্যান ফিলা পত্মী বলেন.‘ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ২৩ নভেম্বর খাসি বর্ষ বিদায় “খাসি সেং কুট¯েœম” পালন করা হয়। পরদিন ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয় খাসি বর্ষ বরণ। আমরা ২০১২ সাল থেকে সিলেট বিভাগের পুঞ্জি হেডম্যানদের উদ্যোগে খাসি বর্ষ বিদায় অনুষ্ঠান পালন করে আসছি।’