চুনারুঘাটের রাণীগাঁওয়ে অপরাধ বৃদ্ধি, চুরি আতঙ্কে ইউনিয়নবাসী

4

চুনারুঘাট থেকে সংবাদদাতা :
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ৯নং রাণীগাঁও ইউনিয়নে বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর চুরি আতঙ্কে এখন ইউনিয়নবাসীর রাতে যেন ঘুম নেই। ফেইসবুক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। দক্ষিণ রাণীগাঁও তাহিরপুর গ্রামের আঃ রাজ্জাক মিয়ার গোয়ালঘর থেকে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা মূল্যের ৩টি গরু ও নাসিমাবাদ বাগানের দুলন উড়াং নামে এক চা শ্রমিকের ২টি গরু চোরেরা চুরি করে নিয়া যায়। উত্তর রাণীগাঁও’র বাদল দেব, রাণীগাঁও পূর্ব বাজারের পাল বাড়ির সুমন বৈদ্য, রাখেশ দেবনাথ, ও পাঁচগাতিয়া গ্রামের নাসির মিয়া সহ ইউ/পি’র বিভিন্ন গ্রাম থেকে ১ সপ্তাহে প্রায় ২৪টি টিউবওয়েলের মাথা সন্ধ্যার পর চোরেরা চুরি করে নিয়ে গেছে। এছাড়া পাঁচগাতিয়া গ্রামের আঃ হকের প্রস্রাবের রাস্তায় কাঠি ও পায়খানার রাস্তায় লাঠি ঢুকিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পরদিন থানা পুলিশ ৪ জনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কোর্ট হাজতে প্রেরণ করে। পরে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে ও আসামীদের মুক্তির দাবিতে মিরাশী নতুন বাজারে ৫ গ্রামবাসী মানববন্ধন ও মোস্তাফিজুর রহমান রিপন চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সাংবাদিকদের নিয়ে তার উপস্থিতিতে এক মানববন্ধন ও সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে আঃ হকের আপন মেয়ের জামাই এমরান ও শ্যালক জুয়েল মিয়া, সাজানো মামলায় এখনো হাজতবাস করছে। এলাকাবাসী তাদের মুক্তি চায়। গাভীগাঁও খেলার মাঠ সংলগ্ন বাড়ি থেকে অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকার দায়ে ৩ যুবতী সহ জয়নাল নামে এক যুবককে স্থানীয় জনতা আটক করে। খবর পেয়ে ৫ শতাধিক উত্তেজিত জনতার হাত থেকে চুনারুঘাট থানা পুলিশ উক্ত ৪ জনকে সন্ধ্যায় উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন জয়নাল সহ গ্রেফতারকৃত ৪ জনকে হবিগঞ্জ কোর্ট হাজতে প্রেরণ করে পুলিশ। আতিকপুর গ্রামের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা দরবেশ আলীর উপর হামলা চালিয়ে তার কান কর্তন সহ হাত পা ভেঙ্গে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে চুনারুঘাট থানায় মামলা হলেও আসামীরা পরে হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিনে আসে। তাহিরপুর গ্রামের লালমোহন দেবনাথ এর পুত্র প্রজেশ দেবনাথ হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হয়ে মাধবপুর উপজেলার শাহজিবাজার এলাকায় চাঁদ তারা নামে এক মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করে। তার ১টি ৩ বছরের ছেলে সন্তানও রয়েছে। স্বামী স্ত্রীকে তার কাজে যাওয়ার কথা বলে ঢাকার গাজীপুরে গিয়ে এক হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করে। হঠাৎ মোবাইল ফোনে স্বামীর সাথে ১ম স্ত্রী কথা বলতে গিয়ে দুই সতিনের মাঝে বাকবিতন্ডা হয়। এতে পরদিন ঘটনাস্থল স্বামীর বাড়ি তাহিরপুর গ্রামে স্বামীর অধিকার পাওয়ার দাবিতে দুই স্ত্রী স্বামীর বাড়িতে অনশন শুরু করে। এদিন রাতেই হিন্দু মেয়েকে শ্বশুর ও শাশুড়ী ঘরে তুলে নেয়। ১ম স্ত্রী বাচ্চা সহ অনশন করে। সালিশ বিচারের কথা বলে পাশের এক বাড়িতে ১ম মুসলিম স্ত্রীকে বাচ্চা সহ আশ্রয়ের স্থান দেওয়া হয়। পরদিন সন্ধ্যায় প্রায় ৫ শতাধিক জনতার সম্মুখে স্বামীর বাড়িতে সালিশ বিচার অনুষ্ঠিত হয়। এ সালিশে গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ১৫ থেকে ৩৫ লাখ টাকার প্রস্তাব করলে, ১ম মুসলিম স্ত্রীর কাবিনের ও বাচ্চার ভবিষ্যৎ বাবদ ১৩ লক্ষ টাকা প্রদানের জন্য চেয়ারম্যান রায় দেন। এ রায় এখনো কার্যকর হয়নি। ১ম স্ত্রী মুসলিম মেয়েটি তার সন্তান নিয়ে রানীগাঁও এলাকার মুরব্বী ও মেম্বার, চেয়ারম্যানের ধারে ধারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মহিলাটি নিরীহ হওয়ায় সে ন্যায়বিচার থেকে আজও বঞ্চিত। মিরাশী কামার দোকানের পশ্চিমের বাড়িতে এক হিন্দু মহিলাকে ছুরি দিয়ে স্তন সহ ক্ষত-বিক্ষত করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। রাণীগাঁও এলাকার ২ যুবকের বিষ পানে আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা ঘটে। জনৈক দুই ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে এক বাল্য বিয়ের ঘটনাও ঘটেছে। করাঙ্গী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে রাতে ট্রাক্টর যোগে বালু পাচার করছে পাচারকারীরা। রাণীগাঁও’র বিভিন্ন এলাকায় প্রতি রাতেই জুয়ার আসর বসে। এতে উঠতি বয়সের ছেলেরা ও যুব সমাজ ধ্বংসের ধার প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। রানীগাঁও, গাজীগঞ্জ ও মিরাশী বাজার এলাকাতে উঠতী বয়সের যুবকরা এখন মাদক সেবন ও মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এসব প্রতিরোধে অভিভাবক সহ সমাজের সচেতন মহল এগিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন। এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের ২/৩ জন অনুসারিরা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান রিপনের বরাত ও তার বক্তব্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে তিনি এ ঘটনাগুলোর বিষয়ে সকলের সহযোগিতা চেয়ে অপরাধ দমন ও চুরি প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার আলাপকালে ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান রিপন বলেন, ইদানিং এমন ঘটনাগুলোর সংবাদ পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে অপরাধী ও চোরদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। অপরাধী ও চোরদের চিহ্নিত করে নতুবা চোরদের আটক করে খবর দিলে, আমি অপরাধী ও চোরদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিব। প্রয়োজনে প্রশাসনকে নিয়ে অপরাধ কর্মকান্ড দমন করব। সে যে কেউ হোক না কেন, ছাড় পাবে না। এ ব্যাপারে চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আলী আশরাফ বলেন এ ব্যাপারে ২/৩ টি বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছি। যেখানেই অপরাধ সেখানেই প্রতিরোধে আমাদের থানা পুলিশের অবস্থান, অপরাধী যে কেউ হোক না কেন তাদেরকে কোন ছাড় দেয়া হবে না। আমাদের পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।