মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন হোক

95

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, শুধু মাদকের জন্য অনেক দেশ কিংবা অনেক সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক ইতিহাসও তার ব্যতিক্রম নয়। মাদকের বিস্তৃতির কারণে অনেক দেশের অর্থনীতি ধ্বংসপ্রায়, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শোচনীয়, খুনাখুনি নৈমিত্তিক ঘটনা, অর্থাহৃ সমাজে চরম নৈরাজ্যকর এক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সংগত কারণেই বাংলাদেশে মাদকের বিস্তৃতি দেখে সচেতন মহল থেকে এমনই নানা আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয় দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই অভিযানে বহু মাদক বিক্রেতা কিংবা বাহক ধরা পড়েছে। বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু মূল হোতারা গ্রেপ্তার হয়েছে সে তুলনায় অনেক কম। এর জন্য অনেকেই আইনের কিছু দুর্বলতাকে দায়ী করছিলেন। অবশেষে গত শনিবার জাতীয় সংসদে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিল ২০১৮ পাস হয়েছে। এতে মাদক পরিবহন, কেনাবেচা, সংরক্ষণ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, অর্থলগ্নিকরণ, পৃষ্ঠপোষকতাসহ বিভিন্ন অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু শুধু কঠোর আইন কি মাদকদ্রব্যের বর্তমান বাড়াবাড়ি কমাতে পারবে এ প্রশ্ন অনেকেরই।
বিশেষজ্ঞদের মত, শুধু আইন প্রণয়ন নয়, আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, মাদক কারবারি ধরা পড়লেও অর্থের বিনিময়ে ছাড়া পেয়ে যায়, বছরের পর বছর মাদক মামলা ঝুলে থাকে, আসামিরা দ্রুততম সময়ে জামিন পেয়ে যায়, দুর্বল তদন্ত প্রতিবেদনের কারণে অনেক আসামি ছাড়াও পেয়ে যায় এসবের প্রতিকার কী? জানা যায়, নতুন আইনে নির্দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত জামিন না দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। মামলাজট কমাতে জেলাপর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা হয়েছে। এগুলো দ্রুত কার্যকর করতে হবে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, কারো কাছে ২৫ গ্রামের বেশি হেরোইন পাওয়া গেলে এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার যে বিধান রাখা হয়েছে, তার মূল শিকার হবে দরিদ্র বাহকরা। বড় কারবারি বা মূল হোতারা অনেক ক্ষেত্রেই অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে গ্রেপ্তার এড়িয়ে যাবে কিংবা নিজেদের ছাড়িয়ে নেবে; কিন্তু সামান্য বাহকদের পক্ষে তা করা সম্ভব হবে না। অথচ এদের অধিকাংশই এ কাজে যুক্ত হয় একান্ত দায়ে পড়ে। এদেরই মৃত্যুদণ্ড হবে সবচেয়ে বেশি। বিষয়টি আইনপ্রণেতাদের ভেবে দেখা প্রয়োজন।
মাদকের অভিশাপ থেকে যেকোনো মূল্যেই হোক দেশকে মুক্ত রাখতে হবে। এ জন্য আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সদস্যদের সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। সমাজে মাদকবিরোধী জনসচেতনতা তৈরির পাশাপাশি তরুণদের জন্য সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে।