স্পোর্টস ডেস্ক :
সেঞ্চুরি করলেন মুশফিকুর রহিম, ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের সেরা স্কোর সংগ্রহ করল বাংলাদেশ। তারপরও ৪৮ রানের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো মাশরাফি বিন মর্তুজাদের। লক্ষ্যমাত্রা একটু বেশিই ছিল। কারণ ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩৮২ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করে জেতাটা যেকোনো দলের পক্ষে কঠিন। তারপরও বাংলাদেশ যে ব্যাটিং নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছে তা বাহবা পাওয়ার যোগ্য। ছয় ম্যাচ খেলে ১০ পয়েন্ট নিয়ে অস্ট্রেলিয়া এখন পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে রয়েছে। আর ৬ ম্যাচ খেলে ৫ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপে বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার দেয়া ৩৮২ রানের লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৩৩ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের এটি সেরা ইনিংস। এর আগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান ছিল ৩৩০। এই বিশ্বকাপেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৩০ রান করে রেকর্ড গড়েছিল টাইগাররা।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আজ সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম। ৯৭ বলে ৯টি চার ও একটি ছক্কার সাহায্যে ১০২ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে মুশফিকের এটি প্রথম সেঞ্চুরি। আর ওয়ানডেতে এটি তার সপ্তম সেঞ্চুরি। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা তিনটি সেঞ্চুরি করলেন। মুশফিকের আগে সাকিব ২টি সেঞ্চুরি করেছেন। এই প্রথমবার বিশ্বকাপ মঞ্চে বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা ৩টি সেঞ্চুরি করলেন। এর আগে ২০১৫ বিশ্বকাপে ২টি সেঞ্চুরি করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
মুশফিক ছাড়া অন্যদের মধ্যে ৫০ বলে ৫টি চার ও তিনটি ছক্কার সাহায্যে ৬৯ রান করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৬২ রান করেছেন ওপেনার তামিম ইকবাল। সাকিব আল হাসান করেছেন ৪১ রান। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের মধ্যে মিচেল স্টার্ক ২টি, নাথান কুল্টার নাইল ২টি, মার্কাস স্টয়নিস ২টি ও অ্যাডাম জাম্পা ১টি করে উইকেট শিকার করেন।
বাংলাদেশ ব্যাটিংয় নেমে শুরুতেই উইকেট হারায়। দলীয় ২৩ রানে রান আউট হয়ে ফিরে যান সৌম্য সরকার। তিনি করেছেন ৮ রান। এরপর ৭৯ রানের জুটি গড়েন তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। দলীয় ১০২ রানে মার্কাস স্টয়নিসের বলে মিড-অফে ডেভিড ওয়ার্নারের হাতে ধরা পড়েছেন সাকিব। ৪১ বলে ৪১ রান করেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
সাকিব ফিরে যাওয়ার পর ৪২ রানের জুটি গড়েন মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবাল। দলীয় ১৪৪ রানে মিচেল স্টার্কের বলে বোল্ড হয়েছেন তামিম। ফেরার আগে তিনি করেছেন ৬২ রান। এবারের বিশ্বকাপে তামিমের এটি প্রথম হাফ সেঞ্চুরি।
তামিম ফিরে গেলে মুশফিকের সঙ্গে জুটি বাঁধেন লিট্ন দাস। দুজনে ভালোই খেলছিলেন। কিন্তু অ্যাডাম জাম্পার বলে এলবিডব্লিউ হন লিটন। রিভিউ নিয়েও তিনি বাঁচতে পারেননি। ১৭ বলে ২০ রান করেছেন লিটন।
এরপর ১২৭ রানের পার্টনারশিপ গড়েন মুশফিক ও রিয়াদ। নাথান কুল্টার-নাইলের করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে রিয়াদ ও চতুর্থ বলে আউট হন সাব্বির। এরপর ৪৯তম ওভারে মিরাজ ও ৫০তম ওভারে আউট হন মাশরাফি বিন মর্তুজা।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩৮১ রান সংগ্রহ করে অস্ট্রেলিয়া। অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার আজ দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেন। ১৪৭ বলে ১৪টি চার ও পাঁচটি ছক্কার সাহায্যে ১৬৬ রান করেন তিনি। এই বিশ্বকাপে এটি এক ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর। আর এবারের ব্শ্বিকাপে ওয়ার্নারের এটি দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
এছাড়া ৭২ বলে ৮৯ রান করেন উসমান খাজা। ১০ বলে ২টি চার ও তিনটি ছক্কার সাহায্যে ৩২ রান করেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সৌম্য সরকার ৩টি ও মোস্তাফিজুর রহমান ১টি করে উইকেট শিকার করেন। ম্যাচসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ফল: ৪৮ রানে জয়ী অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়া ইনিংস: ৩৮১/৫ (৫০ ওভার ওভার)
(ডেভিড ওয়ার্নার ১৬৬, অ্যারোন ফিঞ্চ ৫৩, উসমান খাজা ৮৯, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ৩২, মার্কাস স্টয়নিস ১৭*, স্টিভেন স্মিথ ১, আলেক্স ক্যারি ১১*; মাশরাফি বিন মর্তুজা ০/৫৬, মোস্তাফিজুর রহমান ১/৬৯, সাকিব আল হাসান ০/৫০, রুবেল হোসেন ০/৮৩, মেহেদী হাসান মিরাজ ০/৫৯, সৌম্য সরকার ৩/৫৮)।
বাংলাদেশ ইনিংস: ৩৩৩/৮ (৫০ ওভার)
(তামিম ইকবাল ৬২, সৌম্য সরকার ১০, সাকিব আল হাসান ৪১, মুশফিকুর রহিম ১০২*, লিটন দাস ২০, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৬৯, সাব্বির রহমান ০, মেহেদী হাসান মিরাজ ৬, মাশরাফি বিন মর্তুজা ৬; মিচেল স্টার্ক ২/৫৫, প্যাট কামিন্স ০/৬৫, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ০/২৫, নাথান কুল্টার-নাইল ২/৫৮, প্যাট কামিন্স ২/৫৪, অ্যাডাম জাম্পা ১/৬৮)।
ম্যাচ সেরা: ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)।