গণপরিবহনের মালিক-শ্রমিকদের কাছে দেশের সাধারণ মানুষ যে একেবারেই অসহায়, সেটা নতুন করে প্রমাণিত হয়ে গেল চট্টগ্রামে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেওয়া দণ্ডের জেরে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম-হাটহাজারী মহাসড়ক অবরোধ করে তাণ্ডব চালিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা। আকস্মিক হরতাল ডাকায় চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম-হাটহাজারী মহাসড়কে চলাচলকারী দুই পার্বত্য জেলা ও উত্তর চট্টগ্রামের কয়েক লাখ যাত্রীকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। যে কারণে এই অচলাবস্থা, তা খুবই সামান্য। চট্টগ্রাম মহানগর থেকে ছেড়ে যাওয়া খাগড়াছড়িগামী একটি যাত্রীবাহী বাসকে থামার সংকেত দিয়েছিলেন বিআরটিএর একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত। বাসটি সংকেত অমান্য করে চলে গেলে বিষয়টি থানার পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ ওই বাসের চালককে আটক করে আদালতের কাছে হস্তান্তর করলে আদালত তাকে তিন মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। এরই প্রতিবাদে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। ধর্মঘটের নামে সৃষ্ট অরাজকতায় বিপাকে পড়তে হয় যাত্রীসাধারণকে।
এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। বাস মালিক-শ্রমিকরা সড়ক-মহাসড়কে একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখে চলতে অভ্যস্ত। যাত্রীদের কোনো অধিকার আছে বা থাকতে পারে, এমন বোধ তাদের মধ্যে আছে বলে মনে হয় না। কথায় কথায় ধর্মঘট ডেকে দাবি আদায় করে নেওয়া তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। দেশে সড়ক পরিবহন আইনেরও বিপক্ষে গণপরিবহনের মালিক ও শ্রমিকরা। সদ্য পাস হওয়া এ আইনের সংশোধন চাইলেও সরকার অনড় থাকায় অঘোষিতভাবে ধর্মঘটে যেতে চাইছে মালিক-শ্রমিকদের সংগঠন। অতীতেও ধর্মঘটের ডাক দিয়ে আইনের দণ্ড শিথিল করা হয়েছে। এবারও জাতীয় নির্বাচনের আগে ভোটে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে—এমন ভয় দেখিয়ে নতুন সড়ক পরিবহন আইনে অপরাধী চালকদের শাস্তি ও জরিমানা কমানোর কৌশল নিয়েছে মালিক ও শ্রমিকরা। কিন্তু সরকার এ দাবি আমলে নিতে চাইছে না। ফলে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা চট্টগ্রামে তারই মহড়া দিল।
পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা নিজেদের সব সময় আইনের ঊর্ধ্বে বলে মনে করে। আইন প্রয়োগ করতে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করার প্রবণতাও পুরনো। কিন্তু সরকারকে কোনো অবস্থায়ই নতি স্বীকার করা চলবে না। অবশ্যই কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে। জাবালে নূরের ছয়জনের বিচার যেভাবে শুরু হয়েছে, ঠিক সেভাবেই সব অপরাধীর বিচার হতে হবে। আমরা আশা করব, সরকার তার অবস্থানে অনড় থাকবে। মানুষের পক্ষ নিয়ে দূর করবে গণপরিবহনের সব ধরনের অরাজকতা।