দেশের পুঁজিবাজার গতিশীল করতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য আইসিবিকে দেড় হাজার কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চীনা প্রতিষ্ঠানের কাছে শেয়ার বিক্রির অর্থও ব্রোকারেজ হাউসগুলো দ্রুতই পেয়ে যাবে। এমন অবস্থায় দেশের পুঁজিবাজার দিনে দিনে চাঙ্গা হওয়ার কথা কিন্তু বাস্তবে ঘটছে উল্টোটা। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। হঠাৎ করে বেড়ে গেছে শেয়ার বিক্রির হার। ঘটছে দরপতন। এক দিনে বড় ধরনের দরপতনে ডিএসইর সূচক কমে ৭৯ পয়েন্ট। বাজার বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নির্বাচনের আগে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হতে পারে—এমন আশঙ্কা কাজ করছে ছোট বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। অন্যদিকে বড় বিনিয়োগকারীরা বাজারকে কোনো সাপোর্ট দিচ্ছে না বলে ত্বরান্বিত হচ্ছে দরপতন। তবে আশার কথা, তারল্য সংকট কাটাতে দেশের পুঁজিবাজারে আগামী সপ্তাহে দুই হাজার কোটি টাকার ফান্ড আসবে। এ ছাড়া মূলধনী মুনাফার ওপর ১০ শতাংশ কর ছাড় দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হতে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই বাজার নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
দেশের পুঁজিবাজার ঘিরে আস্থার সংকট অনেক দিনের। এ কারণে বাজারে কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয়নি। অন্যদিকে নতুন পণ্যেরও অভাব আছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সব সময় আতঙ্ক কাজ করে। এর পেছনে কারণও আছে। একসময় পুঁজিবাজারকে প্রতিদিনের কেনাবেচার বাজার বলে অনেকের মনে ধারণা জন্মেছিল। কিন্তু এই বাজারে যে দীর্ঘমেয়াদে অর্থ লগ্নি করতে হয়! ‘কেনার সময় লাভ’—ব্যবসার চিরায়ত সত্য না মেনে অনেকেই শেয়ারবাজারে ব্যবসা করতে এসে লোকসান দিয়েছে। শেয়ার কেনার সময় প্রতিষ্ঠানের অবস্থা বিবেচনা করা হয়নি। অন্যদিকে এক শ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ীর কারসাজি তো ছিলই। বাজার রক্ষা করতে গিয়ে এমন কিছু সিদ্ধান্ত কয়েক বছর আগে নেওয়া হয়েছিল, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। ফলে বাজার ঘিরে একধরনের আশঙ্কা অনেক দিন থেকেই কাজ করছে।
এই আশঙ্কা দূর করে আস্থা ফিরিয়ে আনাটাই এখন সবচেয়ে বড় কাজ। গত কয়েক বছরে বিনিয়োগকারীরা আরো অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে। শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে বাজার চেনা। যাদের শেয়ার বাজারে আছে, সেসব কোম্পানি সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকলে বিনিয়োগ করা হবে বোকামি। অথচ দেশের শেয়ারবাজারে একসময় বেশির ভাগ বিনিয়োগ হয়েছে কিছু না বুঝেই। প্রতিদিনের উপার্জনের বাজার মনে করে বাজারে যাওয়া বিনিয়োগকারীরাই মূলত লোকসান দিয়ে এসেছে। ফলে বাজারবিমুখ হয়েছে অনেক বিনিয়োগকারী। আস্থার সংকট তখন থেকেই শুরু। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য চেষ্টা চলছে। নতুন বিনিয়োগে বাজার স্থিতিশীল হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।