জলবায়ু পরিবর্তন রোধে পদক্ষেপ

55

জলবায়ু পরিবর্তনের অনেক প্রতিক্রিয়া এখন দৃশ্যমান। বিজ্ঞানীদের মতে, ক্রমেই তা প্রকট হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ, বিশেষ করে উপকূলীয় দক্ষিণাঞ্চল চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পরিবেশবিজ্ঞানীদের মতে, ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি ও জীবনযাত্রায় রীতিমতো বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে অনেক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাবে। এক-তৃতীয়াংশ মানুষ অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুতে পরিণত হতে পারে। ক্রমবর্ধমান নোনা পানির আগ্রাসনে অধিকাংশ আবাদি জমি চাষাবাদের অনুপযুক্ত হয়ে পড়বে। ভূগর্ভস্থ স্তর দিয়ে নোনা পানি ক্রমে মধ্যাঞ্চলে চলে আসবে। এমন অবস্থায় দক্ষিণাঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া ছিল অত্যন্ত জরুরি কিন্তু তা হয়নি; বরং জলবায়ু তহবিলের অর্থ নিয়ে চলছে একধরনের টানাটানি। অভিযোগ আছে, সংসদ সদস্য ও মেয়রদের তদবিরের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই—এমন সব প্রকল্পেই বেশি পরিমাণে অর্থ চলে যাচ্ছে। আর তা প্রবল রূপে দৃশ্যমান হচ্ছে সরকারের শেষ সময়ে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
জানা যায়, ২০১০ সালে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটি) গঠনের পর থেকে বিসিসিটির প্রতি বৈঠকে গড়ে ৩০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত আগস্ট মাসে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ৫৯টি প্রকল্পের। আগামী ২৯ অক্টোবর বিসিসিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপনের জন্য ১১০টি প্রকল্প বাছাই করা হয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে, ৮০টির মতো প্রকল্প অনুমোদন পেতে পারে। বছরে সাধারণত বিসিসিটির চারটি সভা হয়। সে হিসেবে পরবর্তী সভা হওয়ার কথা ছিল নভেম্বরের শেষ দিকে বা ডিসেম্বরে। নির্বাচন সামনে থাকায় সভার তারিখও এগিয়ে আনা হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট বা যেসব এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি কম, সেসব এলাকায় রাস্তাঘাট বা পৌরসভার ড্রেন নির্মাণের প্রকল্পে প্রচুর অর্থ দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে বরগুনার বেতাগী পৌরসভার মতো পৌরসভা এই ফান্ড থেকে এখন পর্যন্ত একটি টাকাও পায়নি। পরিবেশমন্ত্রী নিজেও বরাদ্দ নিয়ে হতাশ। তাঁর মতে, বরাদ্দ বেশি যাওয়া উচিত ছিল গবেষণায়, সোলার প্যানেল বসানোর কাজে কিংবা বৃক্ষরোপণ প্রকল্পে। কিন্তু অর্থ যাচ্ছে রাস্তাঘাট ও ড্রেন নির্মাণে। মন্ত্রীর এমন হতাশা যুক্তিসংগত। এতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী এই তহবিলের উপকারপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তন তহবিলের অর্থের অপব্যবহার নিয়ে দেশে ও বিদেশে ভুল বার্তা যাচ্ছে। এর ফলে ভবিষ্যতে বিদেশের সহায়তাও কমে যেতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় আমাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে এমনিতেই অনেক অভিযোগ ও সমালোচনা আছে। তহবিল ব্যবহারের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। এর আগে জাতিসংঘের সবুজ জলবায়ু তহবিলের (জিসিএফ) নীতিনির্ধারণী ফোরামের স্থায়ী সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছিল। অথচ সেই তহবিল থেকে বাংলাদেশ এর আগে প্রায় সাড়ে ছয় শ কোটি টাকা সহায়তা পেয়েছে। তার পরও জলবায়ু তহবিলের ব্যবহার নিয়ে আমাদের এত উদাসীনতা কেন? আমরা চাই, জলবায়ু তহবিলের অর্থ ব্যবহারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হোক এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হোক।