একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়ে গেছে। চলতি সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইছে। গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য ও জেএসডির সঙ্গে নতুন জোট করেছে বিএনপি। জোট সম্প্রসারণের চেষ্টাও করছে ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক দলটি। সংবাদ সূত্রে জানা যায়, এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, বিজেপি ও জাপার সঙ্গে তাদের আলোচনা হয়েছে। সামনের সপ্তাহ থেকেই হয়তো নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ওদিকে বসে নেই মহজোটের প্রধান শরিক আওামী লীগও। প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, নতুন মিত্রের সন্ধান করছে তারা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বাইরে থাকা বিকল্পধারা ও এলডিপির সঙ্গে নির্বাচন বিষয়ে আওয়ামী লীগের যোগাযোগ শুরু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। প্রধান দুই জোটের বাইরে ইসলামী দলগুলোর পাশাপাশি বাম রাজনৈতিক দলগুলোও জোটবদ্ধ হতে পারে। এসব দল ও জোটের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে আওয়ামী লীগ। সব মিলিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসবে এসব জোট ও দলের কার্যকারিতা ততই দৃশ্যমান হবে।
বাংলাদেশের জোটনির্ভর ভোটের রাজনীতিতে এটা নতুন কিছু নয়। অতীতেও ভোটের আগে জোট হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিল। এবারও আওয়ামী লীগ জোটভুক্ত দলগুলোকেই তার নির্বাচনী সঙ্গী হিসেবে পাবে, এটা নিশ্চিত হয়ে আছে। এর সঙ্গে যদি নতুন কোনো রাজনৈতিক দলকে সংযুক্ত করা যায়, ভোটের রাজনীতিতে তার প্রাপ্তি খুব ছোট হবে বলে মনে হয় না। বিশেষ করে সিপিবিসহ বামপন্থী দলগুলো নির্বাচনে এলে সেটা আওয়ামী লীগের জন্যই লাভজনক হবে, যদিও দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বাম গণতান্ত্রিক জোট এখনো একাদশ সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। অন্যদিকে একাদশ সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
জোট গঠনের রাজনীতিতে বরাবরের মতোই লক্ষণীয় যে ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের কদর বেড়েছে। কে কত দলকে জোটবদ্ধ করতে পারছে তার ওপরই যেন রাজনৈতিক সামর্থ্য প্রমাণিত হতে যাচ্ছে। অন্তত জোট গঠনের তোড়জোড় থেকে তেমনটিই অনুমান করা যেতে পারে, যদিও সব দলেরই আদর্শের দিকটি মনে রাখা দরকার। সব দল বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আদর্শগত অবস্থান ও সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল কি না, তা যাচাই করে নিতে হবে। শুধু ভোট নয়, ভোটের পরও এসব জোট রাজনীতিতে ওয়াচডগের ভূমিকা কতটা পালন করতে পারবে সে বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার দাবি রাখে। শুধু ভোটযুদ্ধ যদি জোটের লক্ষ্য হয়, তাহলে তা থেকে ভালো কোনো ফল আশা করা যাবে না। গণতান্ত্রিক পরিবেশ সমুন্নত রাখতে পরিচালিত হোক রাজনৈতিক কার্যক্রম।