মাদক রোধে সচেতনতা

50

 

গণমাধ্যমে নানা পরিসংখ্যানে পাওয়া তথ্য বলছে, দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। কিশোর-তরুণ থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ আসক্ত হচ্ছে মাদকে। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও মাদক কারবারিদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। উদ্ধার করা হচ্ছে ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক। নতুন নতুন রুটে মাদকের চালান আসছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক কারবারি নিহত হয়েছেন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন চার র‌্যাব সদস্য। আহত র‌্যাব সদস্যদের প্রথমে চট্টগ্রাম সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। পরে তিনজনকে স্থানান্তর করা হয় ঢাকা সিএমএইচে। ওদিকে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভের পাশের একটি ধানক্ষেতের ভেতর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি ইয়াবাভর্তি ব্যাগ উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। ব্যাগে ৪৪ হাজার ইয়াবা পাওয়া গেছে। গাজীপুরের টঙ্গীতে গ্যাস সিলিন্ডারে ভরে ফেনসিডিল পাচার করার সময় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
এক দিনের এই ঘটনাগুলোই বলে দিচ্ছে চলমান অভিযানের মধ্যেও মাদকের কারবার থেমে নেই। তথ্য মতে গত পাঁচ মাসের অভিযানে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক জব্দ করেছে। কিন্তু এটাও সত্য যে গত পাঁচ মাসের অভিযানে এই প্রথম বড় ধরনের দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়েছে র‌্যাব। অর্থাৎ মাদক কারবারিরাও মরিয়া হয়ে উঠতে চাইছে। আর এ কারণেই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। মাদক বন্ধে সবার আগে সীমান্ত পুরোপুরি নিশ্ছিদ্র করতে হবে। কোনোভাবেই যেন মাদক ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে সর্বাত্মক সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মনে রাখতে হবে দেশের সাধারণ মানুষ তাদের সঙ্গে আছে। সাধারণ মানুষের পূর্ণ নৈতিক সমর্থন থাকলে যেকোনো কঠিন কাজও সহজ হয়ে যায়। মাদকের অপব্যবহার রোধ করতে না পারলে দেশের সমূহ যে ক্ষতি হবে, তা কোনোভাবেই রোধ করা যাবে না। কারণ মাদকের অপব্যবহার শুধু মাদকেই সীমাবদ্ধ থাকে না। মাদক থেকে আরো অনেক অপরাধের জন্ম হয়।
দেশের সর্বত্র মাদকের কেনাবেচা বন্ধ করার কোনো বিকল্প নেই। তার সঙ্গে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক সচেতনতা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকেও এ ব্যাপারে কাজে লাগাতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী কার্যক্রমের কর্মপরিকল্পনা সম্প্রতি চূড়ান্ত হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। কর্মপরিকল্পনায় প্রতিদিন প্রতিটি ক্লাসে প্রথম পিরিয়ডে তিন থেকে পাঁচ মিনিটের মাদকবিরোধী বক্তব্য দেওয়ার বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ ছাড়া মাদকবিরোধী কমিটি প্রতি মাসে একবার সভা করবে এবং মাসে দুবার শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে উদ্বুদ্ধকরণ সভা হবে।
দেশ ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর মাদকের সহজলভ্যতাও নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। আর সে লক্ষ্যেই পরিকল্পনা করতে হবে।