স্পোর্টস ডেস্ক :
টানা দুই ম্যাচ জেতার পর অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে। প্রথমে ১০ নম্বরে থেকে সাতে এবং পরে ৬ নম্বরে উঠেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তবে আজ হারলে নেমে যেতে হবে আবার ৭ নম্বরে। জিতলে রেটিং বেড়ে শুধু ৬ নম্বর অবস্থানই পাকাপোক্ত হবে না, ৫ ম্যাচের সিরিজ জয়ও নিশ্চিত হবে ২ ম্যাচ হাতে রেখেই। ইতিহাস গড়ার এ মোক্ষম সুযোগ মুঠোবন্দী করতে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ও বিশে^র অষ্টম ক্রিকেটার হিসেবে শততম আন্তর্জাতিক টি২০ খেলতে নামবেন অধিনায়ক মাহমুুদুল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড তৃতীয় টি২০ আজ। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিকেল ৪টায় ফুরফুরে মেজাজেই নামবে টাইগাররা, তবে কোণঠাসা নিউজিল্যান্ড নামবে জিততে মরিয়া হয়ে। পরাজয়ের হ্যাটট্রিক হলেই প্রথমবারের মতো টি২০ সিরিজ হারবে এর আগে ৪ বার বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জেতা নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় ম্যাচে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আত্মবিশ^াসী কিউইরা সিরিজে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে জিততে চায় আজ।
এই সিরিজের আগে বাংলাদেশ গত সাড়ে ১১ বছরে একবারও টি২০-তে হারাতে পারেনি নিউজিল্যান্ডকে। ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডে গিয়ে ১-০, ২০১৩ সালে নিজ দেশে ১-০ এবং ২০১৭ ও ২০২১ সালে নিউজিল্যান্ডে গিয়ে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ৮ ম্যাচ আর দুই বিশ^কাপে একবার করে মোট ১০ বার মোকাবেলা। সাড়ে ১১ বছরে টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০-০ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল। মাত্র ৩ দিনের মধ্যে সেই ব্যবধান দু’টি কমিয়েছে টাইগাররা। এই সিরিজে তা আরও কমানোর দারুণ সুযোগ এসেছে। ব্যবধানটা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারলে আইসিসি র্যাঙ্কিংয়েও অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটবে, ৫ নম্বরে উঠবে বাংলাদেশ। সেজন্য জিততে হবে সিরিজের সব ম্যাচই। তবে আপাতত ৬ নম্বর অবস্থান ধরে রাখার জন্য আজকের ম্যাচটি জিতলেই হবে। পরের দুই ম্যাচ হারলেও র্যাঙ্কিংয়ে ছয়ে থেকে যাবে বাংলাদেশ। এই উন্নতির পেছনে টানা জয় পাওয়াটা ভূমিকা রেখেছে। জিম্বাবুইয়ে সফরে গিয়ে ২-১, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের পর উন্নতি ঘটার অপেক্ষা ছিল কিউইদের বিপক্ষে সিরিজে। প্রথম ম্যাচ জিতেই ৩ ধাপ ওপরে ওঠে বাংলাদেশ। দ্বিতীয়টি জিতে ওঠে ছয় নম্বরে। তবে আজ হারলে আবার এক ধাপ নিচে নেমে আসতে হবে। কিন্তু কোনভাবেই হারতে চায় না টাইগাররা। কারণ এই ম্যাচ জিতলে আরেকটি ঐতিহাসিক সাফল্য ধরা দেবে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবার টি২০ সিরিজ জয় করবে বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজ দুইবার জিতলেও আর কোন ফরমেটে কিউইদের বিপক্ষে ট্রফি জেতা হয়নি বাংলাদেশের। এবার সেই সুযোগ এসেছে।
একটি নয়, দু’টি নয়, মোট ৩টি সুযোগ টাইগারদের সামনে। আজসহ বাকি ৩ ম্যাচের একটি জিতলেই সিরিজ হবে বাংলাদেশের এবং নিশ্চিত হবে র্যাঙ্কিংয়ের ৬ নম্বর অবস্থান। তবে আজকেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে নির্ভার হতে চায় স্বাগতিকরা। বিশেষ করে নিজের শততম টি২০ ম্যাচটি মাহমুদুল্লাহ ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ে অবিস্মরণীয় করতে চান। এই ম্যাচে সাকিব আল হাসান দুটি বিশ^রেকর্ড গড়ায় অপেক্ষায় আছেন। ২ উইকেট নিতে পারলে লাসিথ মালিঙ্গাকে (১০৭ উইকেট) হটিয়ে আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে বিশে^ সর্বাধিক ১০৮ উইকেটের মালিক হবেন তিনি। এছাড়া প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ৩ ফরমেটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১২ হাজারের বেশি রানের পাশাপাশি ৬০০ উইকেটের মাইলফলক পেরিয়ে যাবেন। তাই দারুণ কিছু করতে চাইবেন মাহমুদুল্লাহ-সাকিব এবং অন্যরা। সেজন্য আগের ম্যাচ থেকে যে শিক্ষা পেয়েছে স্বাগতিকরা সেটাকে কাজে লাগাতে হবে মাঠে। প্রথম টি২০-তে প্রতিপক্ষকে রীতিমতো নাজেহাল করে বাংলাদেশ। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে মাত্র ৪ রানের জয় শিক্ষা দিয়েছে বেশকিছু। বেশি আত্মবিশ^াসী হওয়া যাবে না এবং মিরপুরের উইকেটের চরিত্র চিরাচরিত ধীরগতির থেকে কিছুটা গতিপ্রাপ্ত হওয়া যাবে না। তাহলেই প্রতিপক্ষরা সুযোগ তৈরি করবে। অবশ্য মাহমুদুল্লাহর এখানে দোষ নেই, তিনি আগেই সতর্ক করেছিলেন যেকোন মুহূর্তে নিউজিল্যান্ডের এই দলটি জ¦লে উঠতে পারে। গত মাসে হওয়া সিরিজটির আগে অসিদের বিপক্ষে আগে কখনও টি২০ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তাই অভূতপূর্ব সেই অর্জনের পর কিউইদের বিপক্ষে আরও উজ্জীবিত হয়েই নেমেছে স্বাগতিকরা। কারণ এই দলটির কেউ আসন্ন টি২০ বিশ^কাপে নিউজিল্যান্ড স্কোয়াডে নেই। যারা অনেক আগে টি২০ খেলেছেন এবং বর্তমানে শুধু ঘরোয়া ও ফ্র্যাঞ্চাইজি টি২০ ক্রিকেটেই খেলেন তাদের নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে কিউইরা।
ক্রমাগত মিরপুরের উইকেট নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনা, আলোচনা হওয়াতেই হয়ত দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচে কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা গেছে। সেটি যে স্বাগতিকদের জন্য হিতে-বিপরীত হতে পারে তা বোঝা গেছে। সেজন্য আজ আবারও আগের মতোই হতে পারে উইকেট। যদিও শুরুর দিকে ব্যাটিং করা কঠিন ছিল এমনটাই বলেছেন মাহমুদুল্লাহ, পরের দিকে ব্যাটসম্যানদের জন্য সহজ হয়েছে। সেই সুযোগ নিয়েছেন কিউই ব্যাটসম্যানরা। অধিনায়ক লাথাম ছাড়া অবশ্য আর কেউ আহামরি ইনিংস খেলতে পারেননি।