কাজিরবাজার ডেস্ক :
স্বেচ্ছাসেবক লীগের আসন্ন সম্মেলন সামনে রেখে বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বাদ দিয়ে নতুন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সংগঠনটির বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্মল গুহকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এবং যুগ্ম-সাধারণ ও সাবেক ছাত্রনেতা গাজী মেসবাউল হক সাচ্চুকে সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে অন্যায় করে কেউ পার পাবে না। প্রধানমন্ত্রীর শুদ্ধি অভিযানে কার স্বার্থে আঘাত লেগেছে জানি না, তবে এই শুদ্ধি অভিযান সারাদেশ, দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত হচ্ছে। শেখ হাসিনার সৎসাহস আছে। দলের কেউ অপকর্ম করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। আমাদের নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কী কঠোর, শুদ্ধি অভিযানে তা তিনি প্রমাণ করেছেন।
শুক্রবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। এখানে বিতর্কিত লোক এনে দল ভারি করার দরকার নেই। খারাপ লোক দিয়ে দল ভারি করলে অন্ধকার এলে বাতি জ্বালিয়েও তাদের পাওয়া যাবে না। আর পানি ছাড়া যেমন মাছ বাঁচতে পারে না, তেমনি জনগণ ছাড়াও আওয়ামী লীগ বাঁচতে পারবে না। তাই জনগণকে আমাদের সঙ্গে রাখতে হবে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথের বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদককে (পংকজ) নিয়ে কোন অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না। তবে তাকে সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটা নেত্রীর নির্দেশ। সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি সম্মেলনের কাজ করবে। যোগ্যতা অনুযায়ী প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়ে নতুন নেতৃত্ব আনা হবে।
তিনি বলেন সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগে বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন করতে হবে। যারা বিতর্কিত, যাদের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ আছে তাদের বাদ দিতে হবে। সংগঠনে নতুন বিশুদ্ধ রক্ত আমরা চাই, আমাদের নেত্রী চান। এখানে যেন কোন ধরনের বিতর্কিত ব্যক্তি, অনুপ্রবেশকারী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কোন পর্যায়ের নেতৃত্বে স্থান না পায়, এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
বৈঠকে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগে বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন করতে হবে। দল করলে দলের শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। দু’চারজনের শৃঙ্খলা বিরোধী অপকর্মের জন্য গোটা প্রতিষ্ঠান দায়ী হতে পারে না। এই সংগঠনে অসংখ্য ত্যাগী নেতাকর্মী রয়েছেন। যাদের অধিকাংশই অতীতে ছাত্রলীগ করেছেন এবং দুঃসময়ে ছাত্রলীগ করে তারা স্বেচ্ছাসেবক লীগে এসেছেন। এখানে কারও বিচ্যুতি ঘটলে, বিতর্কিত কর্মকান্ডে লিপ্ত হলে অবশ্যই তাদের নেতৃত্বে থাকার কোন অধিকার নেই।
তিনি বলেন, দলের নিয়ম শৃঙ্খলা যারা মানেন না, পকেট ভারি করার জন্য তাদের দলে টানবেন না। নিজেদের দল ভারি করার জন্য দলে বিতর্কিত ব্যক্তিদের অনুপ্রবেশ ঘটাবেন না। এই বিতর্কিত ব্যক্তিরা ভালর চেয়েও খারাপই করে থাকে বেশি এবং দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইবে। সেই অবস্থায় এবার আমারা ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব গড়ে তুলতে চাই। ক্লিন ইমেজের লিডারশিপ আমরা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে গড়ে দিতে চাই, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাকর্মীরাই দায়িত্ব নেবেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন নিয়ে আমাকে নেত্রী যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, সেভাবেই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠিত হয়েছে। এই প্রস্তুতি কমিটির মাধ্যমেই স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মকান্ড পরিচালিত হবে। ১৬ নবেম্বর অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নির্মল গুহ এবং পরিচালনা করবেন সদস্য সচিব গাজী মেসবাউল হক সাচ্চু। সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটিতে সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে যারা থাকতে চান তাদেরও রাখার নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, জাতীয় কাউন্সিল আসছে। সম্মেলন মানেই কিছু নতুন মুখ আসবে। কাউকে আমরা রিটায়ারমেন্ট (অবসর) দিই না, দায়িত্বে পরিবর্তন হয়। শক্তিশালী দল ছাড়া শক্তিশালী সরকার হয় না। দলকে শক্তিশালী করতে নিয়মিত সম্মেলন দরকার। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, আপনারা সম্মেলনের প্রস্তুতি নিন। আমরা তারিখ পরে জানাব। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এগিয়ে আসছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে, সম্ভাব্য তারিখ জেনে আমরা সম্মেলনের তারিখ জানাব। প্রার্থী বিষয়ে নেত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, মনোনয়ন বোর্ড বসবে। নেত্রী সিদ্ধান্ত দেবেন কারা মেয়র প্রার্থী হবেন। তবে একক কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে আপনারা আলাপ-আলোচনা করুন, সিদ্ধান্ত নিন। তবে এবারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। প্রতিপক্ষ আটঘাট বেঁধে নির্বাচনে নামবে। তারা ঐক্যবদ্ধ হলে অনেক শক্তি আছে তাদের। তিনি বলেন, প্রতিপক্ষকে দুর্বল মনে করবেন না। প্রতিপক্ষ আর কিছু না পারুক ষড়যন্ত্রে ওস্তাদ, বিএনপি ষড়যন্ত্রে ওস্তাদ। আপনারা থানায়-থানায়, ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে কর্মিসভা করুন। সরকারের বিরুদ্ধে অপ্রচারের জবাব দিতে হবে। এই সরকার অপকর্মের বিষয়ে অতীতের সরকারের মতো নির্বিকার নয়। এখানে অন্যায় করে কেউ পার পায়নি, পাবেও না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশে সীমাহীন উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু দলীয় পরিচয়ে দু-একজন মাস্তানের জন্য আমাদের কাজ যেন ম্লান হয়ে না যায়। বসন্তের কোকিলদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতায় থাকার পার্টি নয়। জনগণের ইচ্ছার বাইরে ক্ষমতায় থাকার কোন ইচ্ছা আমাদের নেই। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের নাম না নিয়ে তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে নিজেদের এ্যালায়েন্সের কেউ কেউ উল্টাপাল্টা কথা বলেন। তবে সরকারকে দুর্বল ভাববেন না। সততার ভিত্তির ওপর, জনগণের ইচ্ছার ওপর নেত্রী দাঁড়িয়ে আছেন।
সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, যোগ্যতার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের নেতা নির্বাচিত হবে। দলের সহযোগী সংগঠনগুলোকে আরও শক্তিশালী এবং গতিশীল করতে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে কমিটি করা হবে। যার ভোগের লিপ্সা আছে তার দলে দরকার নেই। আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। এখানে বিতর্কিত লোক এনে দল ভারি করার দরকার নেই। আওয়ামী লীগ লুটপাট সন্ত্রাসীদের পার্টি নয়। মানুষের মন জয় করে ক্ষমতায় থাকতে চাই। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, ভূমি দখলকারী, অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের আওয়ামী লীগে দরকার নেই। জনগণ এখন কিছু বলবে না হয়তো, কিন্তু নির্বাচনের সময় জবাব দেবে।