ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এখনো সমস্যায় পড়তে হয় বাংলাদেশকে। একসময় ভারতের কারণে অথবা বাংলাদেশের শাসক মহলের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বাণিজ্য সমস্যা বেশ প্রকট ছিল। এতটা সমস্যা এখন না থাকলেও বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য সম্পর্কে কিছু বাধা রয়েই গেছে; বেশির ভাগই অশুল্ক বাধা। ব্যবসায়ী মহলে এ নিয়ে যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে। তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশের পণ্যের ভারতযাত্রায় নীতিগত এবং মানবিষয়ক বাধা তৈরি করা হয়। এ বিষয়ে নীতি-গবেষক মহলেও সমালোচনা রয়েছে।
সমালোচনা, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের পরও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নতিশীল। এর প্রভাব বাণিজ্যক্ষেত্রেও লক্ষ করা যাচ্ছে। মূলত আওয়ামী সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নীতিগত অবস্থানের কারণে ভারতের ‘বৈরী ভাব’ অপসৃয়মাণ। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বিষয়ে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশে ভারতের অর্থনৈতিক সহযোগিতার পরিমাণও লক্ষণীয় মাত্রায় বেড়েছে। এখনো যেসব বাধা রয়ে গেছে, বিশেষত ভারতের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশসংক্রান্ত, সেসব অপসারণের ব্যবস্থাও হতে হবে। আলোচনার মাধ্যমেই বাধা দূর করা সম্ভব। গত বুধবার রাজধানীতে দুই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও এ আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
বৈঠকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে নমুনা নিয়ে দিল্লি দৌড়াতে হয়, সেখানকার বিআইএস ল্যাবরেটরি থেকে সনদ নিতে হয়। কারণ ভারত বাংলাদেশি পণ্যের বিষয়ে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) সনদে আস্থা রাখে না। এ কারণে অনেক সময় চলে যায় এবং রপ্তানি ব্যয় বেড়ে যায়। তা ছাড়া পাটের ওপর ‘অ্যান্টি-ডাম্পিং’ রয়েছে। এগুলো বড় বাধা; এসব দূর হওয়া জরুরি। বাণিজ্যমন্ত্রীরা বলেছেন, এসব বাধা দূর হবে। বিএসটিআই সনদই ভারতের সব রাজ্যে গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে দুই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একমত হয়েছে। বাধা দূর করার জন্য উভয় দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। পাটের ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং উঠিয়ে নেওয়ার বিষয়েও কথা হবে। দুই দেশের পাট ব্যবসায়ীদের মধ্যে দ্রুত বৈঠক হবে বলে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী জানান। ছয়টি নতুন বর্ডার হাটও হবে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের চেষ্টায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার অনেক সমস্যারই সমাধান হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক চাঙ্গা হয়েছে। গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা বিষয়ক চুক্তি হয়েছে, ছিটমহল বিনিময়ের ঐতিহাসিক চুক্তিও হয়েছে। ফলে আশা করা যায়, তাদের চেষ্টায় বাণিজ্যক্ষেত্রের বাধাগুলোও দূর হবে।