তাহিরপুর থেকে সংবাদদাতা :
গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে কমিউনটি ক্লিনিক। স্বাস্থ্য সহকারীরা তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সেবা প্রদান করছেন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হাওর বেষ্টিত উপজেলা তাহিরপুরের ৭টি ইউনিয়নে গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছেন।
সূত্র জানায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কমিউিনিটি ক্লিনিক স্থাপনের জন্য ১৯৯৬ সালে সরকারী ভাবে প্রস্তাব পাস করা হয়। ১৯৯৮ সাল থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় বাদাঘাট, কাউকান্দি, ঠাকাুরহাটি, বালিজুরী, দক্ষিণকুল ও শ্রীপুর সহ বিভিন্ন গ্রামে ১৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। ২০০১ সালে সারা দেশের ন্যায় তাহিরপুরে ১৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয় এবং একই বছর থেকে ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে পরে।
বন্ধ হযে যাওয়ার পর সরকারী কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো দিনে গরু ছাগল ও রাতে মাদক সেবীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিয় পায়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আবারো ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্য সেবার কাজ শুরু হয়। বর্তমানে প্রতিটি ক্লিনিক খোলা থাকাছে সপ্তাহে ৬ দিন। কোনো কোনো ক্লিনিকে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী আসছে। কোনো কোনোটায় হয়তো ১০ থেকে ১৫ জন রোগীও আসে। আর এসব ক্লিনিকের মাধ্যমে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনাসেবা, টিকাদান কর্মসূচি, পুষ্টি, স্বাস্থ্যশিক্ষা, পরামর্শসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হচ্ছে। সেই সাথে প্রাথমিক ঔষধও প্রদান করা হচ্ছে।
এক সময় কমিউনিটি ক্লিকিগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে থাকালেও বর্তমানে দৃশ্যপট বদলেছে অনেক। ইতিমধ্যে দক্ষিণকুল, শ্রীপুর ও বাদাঘাট কমিউনিটি ক্লিনিকে একাধিক ডেলিভারীও করানো হয়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর দক্ষিণকুল কমিউিনিটি ক্লিনিকে প্রথম ডেলিভারী হয়। দক্ষিণকুল গ্রামের রয়েল মিয়ার স্ত্রী মাকছুরা বেগম কমিউনিটি ক্লিনিকে নবজাতক প্রসব করেন।
সরজমিন উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণকুল কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেছে এক সময় পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে থাকা কমিউনিটি ক্লিনিকটি এখন প্রান ফিরে পেয়েছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অবস্থা ঠিক রেখে সেবা দেয়া হচ্ছে ক্লিনিকে আসা রোগীদের। সে সময় কথা হয় ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচ সিপি মোছাম্মদ আইরন আক্তারের সাথে। তিনি জানান অক্টোবর মাসে ১৯শ ৫৯ জন রোগী স্বাস্থ্য সেবা নিয়েছে। চলতি নভেম্বর মাসে (এখন পর্যন্ত ) ১৩৪৬ জনের মত সেবা নিয়েছে। গত দু’মাসে প্রসূতি সেবা নিয়েছেন ৪ জন। তিনি আরও জানান এক সময় গ্রামের নারীরা কমিউনটি ক্লিনিকে আসতে না চাইলেও এখন আসতে চাইছে।
ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা দক্ষিণকুল পূর্ব পাড়ার জমিলা খাতনু (৩৪) তিনি জানান, এক সময় এটি গরু ছাগলের বাসা ছিল। গত ৪/৫ বছর ধরে এখানে নিয়মিত ডাক্তার থাকেন। ছোটখাট অসুখ হলে তিনি এই হাসপাতাল থেকেই ঔষধ নেন।
বালিজুরী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের দক্ষিণকুল গ্রামের ইউপি সদস্য বাবুল মিয়া বলেন, গ্রামের লোকজন এখন স্বাস্থ্য সমস্যার পরামর্শ ক্লিনিক থেকেই নিয়ে থাকেন।
তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্বাস্থ্য সহকারী দিবাকর সরকার নান্টু বলেন, এক সময় ক্লিনিকগুলোর প্রতি মানুষের একটু অন্যরকম ধারণা ছিল। এখন সে ধারান কিছুটা বদলেছে। লোকজন এখন ক্লিনিকে আসে পরামর্শ এবং চিকিৎসা নিতে।
তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ইকবাল হোসেন বলেন, উপজেলার সবকটি কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম চালু আছে। সেবার মান নিশ্চিত করতে আমরা সার্বক্ষণিক সচেষ্ট আছি।