মাদকদ্রব্যের ব্যবসা ও ব্যবহার উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশে প্রায় ৭০ লাখ লোক মাদকাসক্ত। তাদের বেশির ভাগ ইয়াবাসেবী। অন্যান্য ধরনের মাদকের ব্যবহারও রয়েছে। যেমন হেরোইন, কোকেন, ফেনসিডিল। মাদকের ব্যবহার থাকতে হলে এর সরবরাহও থাকতে হয়। সরবরাহের প্রায় পুরোটাই চোরাচালানের মাধ্যমে আসে। বাংলাদেশ যে আন্তর্জাতিক মাদক পাচারের একটি রুট, সে কথা গণমাধ্যমে বহুবার উল্লিখিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও এ ব্যাপারে অবহিত।
গত শুক্রবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ‘খাত’ নামের নিউ সাইকোট্রপিক সাবস্টেনসেস (এনপিএস) ক্যাটাগরির মাদকের একটি চালান আটক করা হয়েছে। ‘গ্রিন টি’র প্যাকেটে ভরে পাচার করা হচ্ছিল। গন্তব্য আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। চালানটিতে ৪৬৮ কেজি ‘খাত’ রয়েছে। পরে পাচারকারীর শান্তিনগরের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে আরো প্রায় ৪০০ কেজি জব্দ করা হয়। এটি আমাদের দেশে এখনো পরিচিত নয়। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে এর প্রচলন রয়েছে। এ দ্রব্যও যে দেশে প্রচলিত হবে না, সে নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।
মাদকের ব্যবসা ও ব্যবহার বন্ধের জন্য অভিযান পরিচালনা করছে সরকার। ‘জিরো টলারেন্স নীতি’প্রসূত এ অভিযানে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় শ লোক নিহত হয়েছে। মাদকের ব্যবসা ও ব্যবহার ঠেকাতে এ জাতীয় কর্মসূচি যথাযথ কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। জাতীয়-আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, মাদক একটি বৈশ্বিক সমস্যা, এর সমাধান অবশ্যই কাম্য। তবে যে পদ্ধতিতে মোকাবেলা করা হচ্ছে, তাতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এ জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আইন যাতে ঠিকভাবে প্রয়োগ করা যায় সে জন্য আইনের ফাঁকফোকর বন্ধ করতে হবে জরুরি ভিত্তিতে।
মাদক সমস্যার সমাধানে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সব ধরনের ব্যবস্থাই নেওয়া দরকার। জনসচেতনতার বিকল্প নেই। জনসচেতনতা বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠান ভূমিকা পালন করতে পারে। এ বিষয়ে ভিন্নধর্মী একটি উদ্যোগ নিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। চলতি মাসেই এক দিন এক মিনিটের কর্মসূচি পালন করা হবে ঢাকাসহ সারা দেশে একযোগে ‘মাদককে না’ বলবে মানুষ। অবশ্যই এটি সমর্থনযোগ্য কর্মসূচি। সাংস্কৃতিক প্রচারণা চালানোও জরুরি।
মাদকের চাহিদা, সরবরাহ, চিকিৎসা অনেক দিক বিবেচনা করে সমন্বিত কর্মসূচি নিতে হবে। একক কোনো উপায়ে এ সমস্যার মোকাবেলা করা প্রায় অসম্ভব। বাংলাদেশে সরকারি অভিযানে টার্গেট করা হচ্ছে মূলত খুচরা মাদক বিক্রেতাদের। গডফাদাররা রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় গাঢাকা দেওয়ার ফুরসত পায়। তাই আইনি সমস্যায় পড়তে হয় কর্তৃপক্ষকে, তাদের পেছনে লাগলেও প্রমাণ পাওয়া যায় না। গডফাদারদের কথা সরকার জানে। তাদের হয় শাস্তি দিতে হবে অথবা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর এ কাজটি করতে হলে রাজনৈতিক কপটাচার বন্ধ করতে হবে।