ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য বর্তমান সরকারের। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আধুনিক করে সাজানোর পরিকল্পনায় এরই মধ্যে দেশের ৩৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের যাবতীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করেও তার সুফল পাওয়া যায়নি। খরচ হয়ে গেছে হাজার কোটি টাকা। আরো প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প চলমান। অনেক প্রতিষ্ঠানে সরঞ্জাম এখনো প্যাকেটবন্দি, নষ্ট হওয়ার পর মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই। মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবস্থা ও স্পিকারের সমন্বয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম গড়ে তোলা হবে। কঠিন ও দুর্বোধ্য বিষয়গুলো ছবি, এনিমেশন ও ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরা হবে। উদ্দেশ্য হচ্ছে পাঠের বিষয়কে শিক্ষার্থীদের কাছে আনন্দময় করে তোলা। এই কার্যক্রম চালানোর জন্য উপকরণের পাশাপাশি যোগ্য শিক্ষকও প্রয়োজন। তবে সবার আগে দরকার বিদ্যুৎ সংযোগ। সেই সঙ্গে প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক, যাঁরা নিজেদের তৈরি করা কনটেন্ট দিয়ে কার্যকরভাবে শ্রেণিপাঠ পরিচালনা করবেন। কিন্তু বাস্তবে উল্টো ফল ফলতে শুরু করেছে। একদিকে প্রযুক্তিভীতি, অন্যদিকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে দেশ। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকরাও পর্যাপ্ত সুযোগ না পেয়ে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ভুলে যেতে বসেছেন। অনেক স্থানে মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জাম ব্যবহার করাই হচ্ছে না। কিশোরগঞ্জ জেলার এক হাজার ৭৫২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক হাজার ৩৬৫টিতেই মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নেই। বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। যেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে, সেখানে ইন্টারনেটের ধীরগতিই হচ্ছে প্রধান প্রতিবন্ধক। আবার সব ধরনের সরঞ্জাম থাকার পরও অনেক বিদ্যালয়ে অবকাঠামো না থাকায় মাল্টিমিডিয়া বা ডিজিটাল ক্লাসরুম করা যায়নি। অন্যদিকে ক্লাসরুম ও মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জাম থাকার পরও দেশের অনেক স্থানে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। কারণ সেখানে নেই উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক। এদিকে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নিয়েও প্রশ্ন আছে। সরকারিভাবে মাত্র ১৪ দিনে আইসিটির প্রশিক্ষণ দিয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস পরিচালনা কতটা সম্ভব, এটাও বড় প্রশ্ন। এমনও দেখা গেছে, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জামের প্যাকেটই খোলা হয়নি। কোথাও কোথাও ল্যাপটপ ব্যবহৃত হচ্ছে ব্যক্তিগত কাজে। কোথাও সব সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে গেছে, মেরামত করা হয়নি। কোথাও পাঠদান চলছে দায়সারাভাবে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় নিশ্চয় আছে। সার্বিকভাবে সব স্কুলে গিয়ে অবস্থা দেখতে হবে। কোথায় মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জাম দেওয়া যাবে তা আগে থেকেই নির্ধারণ করে রাখতে হবে। সবার আগে প্রয়োজন প্রশিক্ষিত শিক্ষক ও অবকাঠামো। অবকাঠামো ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে না পারলে শুধু সরঞ্জাম সরবরাহ করে কোনো লাভ হবে না। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয়ে দৃষ্টি দেবে।