ইসলামের আন্তর্জাতিক মানবিক নিরাপত্তার আইন

149

॥ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান ॥

(পূর্ব প্রকাশের পর)
আমেরিকার ঞযব উবপষধৎধঃরড়হ ড়ভ ওহফবঢ়বহফবহপব এর ১৩ বছর পর ১৭৮৯ সালের জুলাই মাসে ফ্রান্সের বিপ্লবীরা স্বৈরাচারী রাজাকে ক্ষমতাচ্যুত করে তারা ইত:পূর্বে যেইসব অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল সেগুলোকে অন্তর্ভূক্ত করে ১৭৮৯ সালের ২৬ আগষ্ট “উবপষধৎধঃরড়হ ড়ভ জরমযঃং ড়ভ সধহ ধহফ ড়ভ ঃযব পরঃরুবহ” নামক ঐতিহাসিকক ঘোষণাপত্র সম্পাদন করে। এতে বলা হয়Ñ গবহ ধৎব নড়ৎহ ধহফ ৎবসধরহ ভৎবব ধহফ বয়ঁধষ রহ ৎরমযঃং.” “উবপষধৎধঃরড়হ ড়ভ জরমযঃং ড়ভ গধহ ধহফ ড়ভ ঃযব ঈরঃরুবহ, অৎঃরপষব-১”। এতে স্বাধীনতা, সম্পত্তি, নিরাপত্তা, অন্যায়ের প্রতিবাদ, বাক স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রভৃতি অধিকারের উল্লেখ ছিল। “ওনরফ, অৎঃরপষব-২. আমেরিকা ও ফ্রান্সের মানবাধিকারের এই প্রভাব ঊনবিংশ ও বিংশ শতকে পুরো ইউরোপীয় মহাদেশকে গ্রাস করে ফেলে এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সংবিধানে মানবাধিকার বিষয়টি স্থান করে নেয়। “ইধৎর, উৎ. ঊৎংযধফঁষ, ওনরফ, চ-২৩-২৪ ক্রমে মানবাধিকারের এই আন্দোলন এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বিস্তৃতি লাভ করে।
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় মহানবী সা. কর্তৃক গৃহিত বাস্তব পদক্ষেপ :
১। হিলফুল ফুযুলের প্রতিষ্ঠা : মহানবী (সা.) এর আবির্ভাব ঘটে আরব দেশে এক বেদুঈন অঞ্চলে, যেখানে অতীতে কখনো নগর জীবনের নান্দনিকতা ও সভ্যতার ছোঁয়া লাগেনি। “অষ-অমমধফ অননধং গধযসঁফ অঃযৎ-ধষ অৎধন ঋরধষ- ঐধফধৎধঃ-ধষ টৎঁ নলুধয ঊমুঢ়ঃ : উধৎ ধষ-গধ-ৎরভ. চ-৫-৬” । এখানকার জাহিলী পরিবেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত সমাজে জাহিলিয়্যাত ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। মহানবীর (সা.) আগমনের সমসাময়িককালে মক্কার নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব ছিল আবু জাহল, আবু লাহাব, উতবাহ, শায়বাহ প্রমুখের হাতে। মানবাধিকার সম্পর্কে তাদের স্বচ্ছ ধারণা ছিল না বলে প্রতিনিয়ত তাদের হাতে মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত ও পর্যুদস্ত হচ্ছিল। এমনি এক বৈরী পরিবেশে আবির্ভূত হওয়ার পর মহানবী (সা.) লক্ষ্য করেন যে, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বহু সন্তান পিতৃহারা হয়, অগণিত নারী হয় স্বামী কিংবা পুত্রহারা। মানবাধিকার চরমভাবে লংঘিত হয় এই যুদ্ধ-বিগ্রহে। অসহায়-দুস্থ-দুর্গত লোকজন বঞ্চিত হয় তাদের প্রাপ্য অধিকার হতে, ইয়াতীম-নি:স্ব বিধবাও বঞ্চিত হয় তাদের ন্যায্য পাওনা হতে। অত্যাচারীদের দোর্দন্ড প্রতাপ দুর্বল অসহায় লোকদের সদা সন্ত্রস্ত করে রাখে। সুতরাং এই বিপর্যয়কর অবস্থা হতে উত্তরণের জন্য মাত্র ১৭ বছর বয়সে মহানবী (সা.) মানবাধিকারের কতিপয় ধারা সংযোজনপূর্বক ‘হিলফুল ফুযূল’ গঠন করেন, যার মূল বক্তব্য ছিল- সমাজ হতে অশান্তি দূর করা, পথিকদের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অভাবগ্রস্তদের সাহায্য-সহযোগিতা করা, মজলুমের সাহায্যে এগিয়ে আসা এবং কোন অত্যাচারীকে মক্কায় আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেয়া। “আব্দুল, কাদের, ড. আ.ক.ম, সীরাতু সায়্যিদিল মুরসালীন, চট্টগ্রাম : ইসলামিয়া লাইব্রেরী, ২০০১. পৃ. ৩৫-৩৬”।
২। বায়আতুল আকাবার শপথ : হিজরতের অব্যবহিত পূর্বে মহানবী (সা.) হজ্ব উপলক্ষে ইয়াছরিব হতে মক্কায় আগত খাযরাজ গোত্রীয় লোকদেরকে আল-আকাবা নামক স্থানে যে বায়আত বা আনুগত্যের শপথ করান তাতে মানবাধিকারের মৌলিক কতিপয় ধারা লক্ষ্য করা যায়। মহানবী (সা.) বলেনÑ “তোমরা আমার হাতে এ বিষয়ে আনুগত্যের শপথ (বায়আত) কর যে, তোমরা আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, যেনা-ব্যভিচার করবে না, তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, কারো বিরুদ্ধে মনগড়া কোন মিথ্যা অপবাদ দিবে না”। “অনঁ-অনফঁষষধয ওংসধরষ ইঁশযধর, অং ঝধযরয উরষযর : কঁঃঁন কযধহধ জধংরফরুধয. ১৯৭৭ ঠঙখ-১, চ-৭. মহানবী (সা.) এর উক্ত বাণীতে ধর্ম পালনের অধিকার, সম্পদের অধিকার মান-মর্যাদাও সম্ভ্রমের অধিকার এবং জীবনের অধিকার নিশ্চিত করা হয়।
৩। মদীনা সনদের প্রবর্তন : ৬২২ খ্রি. মহানবী (সা.) যখন মক্কা হতে ইয়াছরিব তথা মদীনায় হিজরত করেন তখন মদীনায় তিন শ্রেণীর জনগোষ্ঠী বাস করতোÑ এক: একনিষ্ঠ মুসলিম সম্প্রদায় দুই : মদীনার আদি মুশরিক তথা পৌত্তলিক সম্প্রদায় এবং তিন : মদীনার ইয়াহুদী সম্প্রদায়।
এ ধরণের একটি বহু জাতিক ও বহুধর্ম ভিত্তিক অঞ্চলে হিজরত করে মদীনার ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রধান হিসাবে প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে মহানবী (সা.) হিজরতের প্রথম বর্ষে একটি লিখিত সনদ জারী করেন। ইতিহাসে এটি ‘মদীনা সনদ’ নামে প্রসিদ্ধ। “আব্দুল কাদের, ড.আ.ক.ম, আধুনিক রাষ্ট্রের ধারণা ও মহানবী সা. জনকল্যাণমূলক আদর্শ রাষ্ট্র, ঢাকা : বি.আই.সি.এস, সীরাত সংকলন, ২০০২, পৃ. ২২-২৩”। আরবী ভাষায় জারীকৃত এই সনদে ৫৩টি ধারা বিদ্যমান ছিল, যার অনেকগুলো ধারাই ছিল মানবাধিকার বিষয়ক। এতে উল্লেখ করা হয় যে, মদীনায় বসবাসকারী সকল ইয়াহুদী এবং ইয়াছরিব ও কুরাইশের সকল মুসলিম জনগোষ্ঠী একটি স্বতন্ত্র জাতি এবং সকলে সমান নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকার ভোগ করবে। পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় থাকবে এবং কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা যাবে না, কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে প্রচলিত প্রথা ও ন্যায়বিচার মোতাবেক রক্তপণ আদায় করতে হবে, কেউ বন্দী হলে ন্যায়বিচার মোতাবেক তাকে মুক্ত করতে হবে, দুর্বল ও অসহায়কে আশ্রয় দেয়া হবে এবং সর্বতোভাবে তাদের রক্ষা করা হবে, ঋণগ্রস্তদের ঋণের বোঝা লাঘব করা হবে, অত্যাচারী, পাপিষ্ঠ এবং সমাজে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সকলে অবস্থান গ্রহণ করবে, তারা কারো সন্তান কিংবা নিকটাত্মীয় হলেও। কোন অন্যায়কারীকে সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে না এবং কোন প্রকার আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। কেউ কারো অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না, মহানবী (সা.) এর পূর্বানুমতি গ্রহণ ব্যতীত কেউ যুদ্ধে জড়িত হতে পারবে না, একজনের অপকর্মের জন্য অন্যজনকে দায়ী করা যাবে না, ইয়াহুদীদের মিত্ররাও সমান নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা ভোগ করবে, বহি:শত্র“ দ্বারা মদীনা আক্রান্ত হলে একে রক্ষা করার জন্য সকলে সম্মিলিত প্রায়াস চালাবে। “আব্দুল, কাদের, ড.আ.ক.ম, মদীনা সনদ : একটি পর্যালোচনা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জার্নাল অব ল, ১৯৯১, খ. ৪, পৃ. ২৫৭-২৬১”। এভাবে মদীনা সনদের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও গোত্রের মানুষের পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করার নিশ্চয়তা বিধানের নজীর পৃথিবীর ইতিহাসে এটিই প্রথম। সমাজের সকল শ্রেণীর নাগরিকের জীবন, সম্পদ, সম্ভ্রম ও ধর্মীয় অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান এবং পরমত সহিষ্ণুতা এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকদের পারস্পরিক সমঝোতা ও সম্প্রীতির উপর ভিত্তি করে রচিত মদীনা সনদ বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধান বা শাসনতান্ত্রিক সরকারের মর্যাদা লাভ করে। “ঐধসরফঁষষধয, উৎ. গঁযধসফ, ঞযব ঋরৎংঃ ডৎরঃঃবহ ঈড়হংঃরঃঁঃরড়হ রহ ঃযব ড়িৎষফ, খধযড়ৎব : ঝযধয গঁযধসধফ অংযৎধভ, ১৯৮১, চ.৪”
৪। বিদায় হজ্বের অমোঘ ভাষণ : বিদায় হজ্বে প্রদত্ত মহানবী (সা.) এর ঐতিহাসিক ভাষণ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসাবে বিবেচিত। কোন আন্দোলন কিংবা সংগ্রামের মুখে নয়, কোন চাপের কাছে নত স্বীকার করে নেয়, সম্পূর্ণ নবুওয়তী দায়িত্ব ও কর্তব্যের খাতিরে স্বত:স্ফূর্তভাবে প্রদত্ত এই ভাষণে তিনি মানবাধিকার বিষয়ে যে সুস্পষ্ট বক্তব্য রাখেন তা অবিস্মরণীয়। তিনি বলেন, ‘আজকের এই দিন, এই মাস ও এই শহর তোমাদের নিকট পবিত্র অনুরূপভাবে তোমাদের জীবন এবং সম্পদ ও পবিত্র’। “ঐধৎঁহ অনফঁং ঝধষধস (বফ) ঞধযলরন ংরৎধঃ ওনহ- ঐরংযধস, কঁধিরঃ : উধৎ-ধষ ইঁযঁঃয ধঃ ওংষধসরুধয, ১৯৮৪, চ, ৩২৫”।
রাসূল (সা.) আরো বলেন, কারো নিকট কোন সম্পদ গচ্ছিত থাকলে তা প্রকৃত মালিকের নিকট অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। জাহিলী যুগের সমস্ত সুদ প্রথা রহিত করা হল, কিন্তু মূলধন ফেরত পারবে।” “ওনরফ, চ.৩২৬”। “সম্মতি ও সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করা অবৈধ। “ওনরফ, চ.৩২৭”। “জাহিলী যুগের সকল রক্তের প্রতিশোধ রহিত করা হল”। “ওনরফ, চ.৩২৬”। ইচ্ছাকৃত হত্যার শাস্তি মৃত্যুদন্ড, আর অনিচ্ছাকৃতভাবে হত্যার শাস্তি হল একশত উট রক্তপণ আদায়। “অষ-ঔধযরু-অসৎরহন ইধযৎ, করঃধন-অষ-ইধুধঃ ধিষ ঞধনুুধহ, ইধরৎঁঃ : উধৎ ধষ ঋরৎশৎ, ১৯৬৮, ঠড়ষ-১, চঁৎঃ-২, ৫৩”। মহানবী (সা.) কর্তৃক মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়টি জাতিসংঘের ঞযব টহরাবৎংধষ উবপষধৎধঃরড়হ ড়ভ ঐঁসধহ জরমযঃং (১৯৪৮) এর ৩, ৬ ও ১৭ নং অনুচ্ছেদে এবং সংবিধানের ৩২, ৪২, ৪২ (১) নং অনুচ্ছেদেও স্থান পেয়েছে।
স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকার সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, “তোমাদের স্ত্রীদের উপর তোমাদের অধিকার রয়েছে। আবার তোমাদের উপরও তোমাদের স্ত্রীদের অধিকার রয়েছে। তাদের উপর তোমাদের অধিকার হল তোমাদের বিছানায় তোমরা ছাড়া অন্য কেউ যেন না যায় এবং তারা যেন কোন অশ্লীল কাজ সম্পাদন না করে; তোমরা তোমাদের স্ত্রীদেরকে আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর নির্দেশে তোদের সাথে দাম্পত্যের সম্পর্ক স্থান করে তাদেরকে নিজেদের জন্য বৈধ করেছ। “ঐধৎঁহ, অনফঁং ঝধষধস, ওনরফ, চ.৩২৬”। স্বামী-স্ত্রীর মানবাধিকার বিষয়টি জাতিসংঘের ঞযব টহরাবৎংধষ উবপবষধৎধঃরড়হ ড়ভ ঐঁসধহ জরমযঃং এর ১৬নং অনুচ্ছেদে এবং ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঈড়াবহবহঃ ড়ভ ঈরারষ ধহফ চড়ষরঃরপধষ জরমযঃং (ওঈঈচজ) এর ২৩নং অনুচ্ছেদ স্থান লাভ করে।
মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের সীমারেখা নির্ধারণ করে মহানবী (সা.) বলেন “এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। আর মুসলিম জাতি ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ।
অতএব, পারস্পরিক সম্মতি ও সন্তুষ্টি ব্যতীত কোন মুসলিমের জন্য অন্য মুসলিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা বৈধ নয়”। “ওনরফ, চ.৩২৭”। মহানবী (সা.) আরো বলেন, “তোমাদের রব এক এবং তোমাদের পিতা এক। সকলকে আদম থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে আর আদম (আ.)কে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি থেকে। “অষ-ঔধযরু-অসৎরহন ইধযৎ, শরঃধন- অষ-ইধুধহ ধিষ ঞধনুুধহ. চ. ১৬”। এভাবে ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধকে অনেক ঊর্ধ্বে স্থান দেয়া হয়েছে। ঋুুবব বলেন, ইসলামের ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা কেবল প্রচার-প্রোপাগান্ডার মধ্যেই সীমিত নয়; বাস্তব জীবনেও তা অনুসরণের তাগিত দেয়া হয়। বস্তুত ইসলামী ভ্রাতৃত্ব ইসলামের চিরন্তন সোনালী অধ্যায়ের এক অবিচ্ছেদ্য অংগ। “ঋুুবব, অংধষভ, অ.অ., ঙঁঃ ষরহবং ড়ভ গড়যধসসধফধহ খধ,ি খড়হফড়হ : ঙীভড়ৎফ টহরাবৎংরঃু চৎবংং, ওহঃৎড়ফঁপঃরড়হ, চ.১৩.”। জাতিসংঘের ঞযব টহরাবৎংধষ উবপষধৎধঃরড়হ ড়ভ ঐঁসধহ জরমযঃং-এর ১নং অনুচ্ছেদে মানুষের পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বসূলভ আচরণের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
দাস-দাসীদের সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, “তোমরা দাস-দাসীদের ব্যাপারে সাবধান থাকবে। তারা তোমাদেরই ভাই। তোমরা যা খাবে তাদেরকেও তা খেতে দেবে, তোমরা যা পরবে, তাদেরকেই তা পরতে দেবে। তাদের ্পর কোন প্রকার নির্যাতন চালাবে না, তাদের মনে আঘাত দিবে না।” “ইঁশযধৎর, অনঁ অনফঁষষধয ওংসধরষ, ওনরফ, ঠড়ষ, ১, চ, ৯ ”। শুধু তাই নয়, মহানবী সা. স্বীয় দাস যায়েদকে মুক্ত করে দিয়ে নিজের প্রতিপাল্য হিসেবে গ্রহণ করে দাসদেরকে মর্যাদার আসনে সমাসীন করেছেন। জাতিসংঘের ঞযব টহরাবৎংধষ উবপষধৎধঃরড়হ ড়ভ ঐঁসধহ জরমযঃং- এর ৪নং অনুচ্ছেদে এবং ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ড়ভ পরারষ ধহফ ঢ়ড়ষরঃরপধষ জরমযঃং (ওঈঈচজ) এর ৮নং অনুচ্ছেদেও দাসত্বের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
বংশ কৌলিণ্য ও বর্ণবাদ বিষয়ে মহানবী (সা.) বলেন, “কোন অনারব ব্যক্তির ওপর কোন আরববাসীর এবং কোন কৃষ্ণাঙ্গের উপর কোন স্বেতাঙ্গের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের একমাত্র মাপকাঠি হল তাকওয়া।” “অষ-ঔধযরু-অসৎরহন ইধযৎ, শরঃধন- অষ- ইধুধহ ধিষ ঞধনুুধহ, চ-৫৪”। উক্ত বক্তব্যে মহানবী (সা.) বংশ কৌলিন্য বর্ণবাদ প্রথাকে স্থান দেননি।
১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর ঞযব উবপষধৎধঃরড়হ ড়হ ঃযব ঊষবসরহধঃরড়হ ড়ভ ধষষ ভড়ৎসং ড়ভ জধপরধষ উরংপৎরসরহধঃরড়হ এর অনুচ্ছেদ-এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে যে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য হল মানব মর্যাদার বিরুদ্ধে একটি অপরাধ এবং তা টহরঃবফ ঘধঃরড়হং ঈযধৎঃবৎ ঃযব ঁহরাবৎংধষ উবপষধৎধঃরড়হ ড়ভ ঐঁসধহ জরমযঃং এর পরিপন্থী এবং জাতিসমূহের বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থানের পথে বাধা স্বরূপ। “বেরা মন্ডল ও মো. শাহজাহান মন্ডল, প্রাগুক্ত, পৃ. ১১১-১১২”।
বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে মানবাধিকার : বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থা ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ঘোষিত ঞযব টহরাবৎংধষ উবপষধৎধঃরড়হ ড়ভ ঐঁসধহ জরমযঃং- এর উত্তরাধিকার লালন করছে। বিশ শতকের প্রথম থেকেই মানব সভ্যতা অত্যন্ত অসহায়ভাবে দুটো ভয়াবহ বিশ্বযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছে। মানবাধিকারের ললাটে কালিমা লেপন করে এতে লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ নারী-পুরুষ- শিশু বর্বরতম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়। অতঃপর ভার্সাই চুক্তি ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তুপের উপর জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। “আহমদ, ড. এ.বি. এম শামসুদ্দীন, মদীনা সনদের আলোকে মানবাধিকার ঘোষণা, তা.বি.পৃ. ৮০”। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একনায়কত্ব ও ফ্যাসিবাদের ভয়াবহতা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলার প্রেক্ষাপটে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ভয়াবহতা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলার প্রেক্ষাপটে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সৃষ্টিকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য সামরিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে সর্বপ্রথম মানবাধিকারের প্রতি বিশ্বসমাজের উৎকণ্ঠা প্রকাশ পায়। ফলে নাগরিকদের নিরাপত্তার প্রতি আন্তর্জাতিক চেতনা সৃষ্টি হয়। যার ফলশ্র“তিতে ১৯৪৫ সালে সানফ্রান্সিসকো শহরে জাতিসংঘের সনদ প্রণয়নকালে এর স্থপতিগণ মৌলিক মানবাধিকার, ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য ও মানুষের মর্যাদার প্রতি তাঁদের আস্থা ব্যক্ত করেন। “রেবা মন্ডল, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৮-৩১”।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সভায় ৩০টি অনুচ্ছেদ সম্বলিত যে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয় তার ৩ থেকে ২১ পর্যন্ত অনুচ্ছেদসমূহে ১৯টি নাগরিক অধিকার ও রাজনৈতিক অধিকার স্থান পেয়েছে এবং এর ২২ থেকে ২৭ পর্যন্ত অনুচ্ছেদসমূহে ৬টি অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। মানবাধিকারের এই সর্বজনীন ঘোষণা গৃহীত হওয়ার পর স্বাধীনতা প্রাপ্ত প্রায় সকল রাষ্ট্রের সংবিধানে উক্ত ঘোষণাপত্রে বর্ণিত মানবাধিকার সমূহ মর্যাদা সহকারে স্থান পেয়েছে। জাতিসংঘ তার সদস্য রাষ্ট্রসমূহের জন্য মানবাধিকারের এই সনদ অনুসরণ বাধ্যতামূলক করে নি। কিন্তু এটি অনুমোদন লাভ করার পর সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে এতে স্বেচ্ছামূলক করে নি। কিন্তু এটি অনুমোদন লাভ করার পর সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে এতে স্বেচ্ছামূলক স্বাক্ষর প্রদানপূর্বক নিজ নিজ দেশে তা বাস্তবায়নের আহবান জানানো হয়। কোন দেশ এই সনদ কতটুকু অনুসরণ করছে তা পর্যবেক্ষণ ও এ সম্পর্কিত রিপোর্ট প্রদানের জন্য জাতিসংঘ একটি স্থায়ী মানবাধিকার কমিশন গঠন করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই কমিশনের শাখা রয়েছে যার মাধ্যমে জাতিসংঘ তার সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মানবাধিকার বিষয়ক যাবতীয় রিপোর্ট অবহিত হয়। (অসমাপ্ত)