দেশের একাদশ সাধারণ নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে ততই এই নির্বাচন ঘিরে নানামুখী তৎপরতা দৃশ্যমান হচ্ছে। এরই মধ্যে সরকারি দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের এলাকায় জনসংযোগ করার জন্য বলা হয়েছে। বিএনপিও সম্প্রতি একটি সমাবেশ থেকে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে বলেছে, দলের চেয়ারপারসনের কারামুক্তির ওপরই তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি নির্ভর করছে। অন্যদিকে সংসদের বাইরে থাকা ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল ও তাদের জোট। নির্বাচনের আগে উভয় জোটে নতুন নতুন রাজনৈতিক দল অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থাগুলোও আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছুই। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট গত বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুুরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নির্বাচন কমিশন সচিব জানিয়েছেন, এটা ছিল তাঁর বিদায়ী বৈঠক। বৈঠক শেষে মার্শা বার্নিকাট সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এই বৈঠকে নির্বাচন প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনে সব দলকে সমান সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মার্শা বার্নিকাট। একাদশ সংসদ নির্বাচন যাতে অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়, নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছেন। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনেই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মার্শা বার্নিকাট। ওদিকে গত বুধবার রাতে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের প্রতিনিধিসভায় আন্তর্জাতিক বিষয়ের উপকমিটির শুনানিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর প্রিন্সিপাল ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যালিস জি ওয়েলস জানিয়েছেন, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপীয় ইউনিয়নও চায় সংবিধান মেনেই ভোট হোক, তবে অবশ্যই তা অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও আশা করে, সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই সব দলের সমান উপস্থিতি থাকবে।
মোট কথা, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের অংশীজনদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সমান আগ্রহ রয়েছে। এই নির্বাচন যে সরকার ও ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার দায়বদ্ধতা ইসির। তবে সরকারের দায়িত্বও কম নয়। নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ইসির অগ্নিপরীক্ষা ৩০ জুলাই। তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হলে সাধারণের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি হবে। সাধারণের বিশ্বাসের ভিত যত দৃঢ় হবে নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য করার কাজ তত সহজ হবে।