তথ্য-প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ দ্রুত এগোচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সময়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। জাতিসংঘের ২০১৮ সালের ই-গভর্নমেন্ট সূচকে বাংলাদেশ ৯ ধাপ এগিয়েছে। ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান হয়েছে ১১৫তম। একই সঙ্গে ই-পার্টিসিপেশন সূচকে ৩৩ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ হয়েছে ৫১তম দেশ। ইলেকট্রনিক বা ই-গভর্নমেন্ট সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে শ্রীলঙ্কা, ভারত ও মালদ্বীপ। ই-পার্টিসিপেশন সূচকে বাংলাদেশের আগে রয়েছে শুধু ভারত।
কোনো দেশে ই-গভর্ন্যান্স ও ই-পার্টিসিপেশন যত শক্তিশালী হয়, সে দেশের সরকারি কাজকর্মের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি তত বাড়ে। মানুষ বেশি করে সরকারি কাজকর্ম সম্পর্কে অবহিত হয়। সেবা গ্রহণ সহজ হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য তথা যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতি পায়। একই সঙ্গে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও সরকারি কাজে হয়রানি ইত্যাদি অনেক কমে যায়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সর্বশেষ জরিপে বাংলাদেশে দুর্নীতির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। দুর্নীতির ধারণা সূচকে ২০১৬ সালে ১৭৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৫তম, ২০১৭ সালে দুই ধাপ উন্নতি হওয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান হয়েছে ১৪৩তম। এখানে ই-গভর্নমেন্ট ও ই-পার্টিসিপেশনের একটি বড় ভূমিকা থাকতে পারে বলেই ধারণা করা যায়। কিন্তু এখনো বাংলাদেশের অবস্থান নাগরিক হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জাকর। এই কলঙ্ক থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে। গৌরবজনক অবস্থানের দিকে এগোতে হবে। তার জন্য ই-গভর্ন্যান্সকে ক্রমান্বয়ে আরো জোরদার করতে হবে। সাধারণত ই-গভর্ন্যান্স বলতে বোঝায় সরকারি যাবতীয় সেবা, তথ্য আদান-প্রদান, লেনদেন ও বিদ্যমান বিভিন্ন ব্যবস্থার সমন্বয় সাধনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার। তথ্য-প্রযুক্তির এই ব্যবহার হবে সরকার ও জনগণের মধ্যে (জিটুসি), সরকার ও ব্যবসা-বাণিজ্যে (জিটুবি), আন্ত সরকার (জিটুজি) এবং সরকার ও কর্মীদের মধ্যে (জিটুই)।
আমরা একসময় দেখেছি বিভিন্ন সরকারি কাজের দরপত্র নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ হতে। শিক্ষা ভবনে প্রায়ই এমন সংঘর্ষ হতো। ইলেকট্রনিক পদ্ধতির ব্যবহার শুরু করার পর তা ক্রমেই কমছে। এখন প্রায় নেই বললেই চলে। এখন দেশব্যাপী ভূমি অফিসগুলোকে বলা হয় দুর্নীতির আখড়া। জমি কেনাবেচা, নামজারিসহ যাবতীয় কাজ তথ্য-প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসা গেলে এখানেও দুর্নীতি অনেক কমবে। পাশাপাশি দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলোর কার্যক্রম আরো স্বচ্ছ ও শক্তিশালী করতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আগের তুলনায় বর্তমানে অনেকটাই শক্তিশালী। জনগণের কাছে তাদের কর্মকাণ্ড ক্রমেই বেশি করে দৃশ্যমান হচ্ছে। জনবল, প্রশিক্ষণ ও লজিস্টিকস দিয়ে তাদের আরো শক্তিশালী করতে হবে। পাশাপাশি, রাষ্ট্রীয় কাজকর্মে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার যত বাড়বে, তাদের দুর্নীতি অনুসন্ধানের কাজও তত বেশি সহজ হবে।