বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণ ঘটছে। অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি সূচকে ক্রমোন্নতি লক্ষণীয়। তারই ধারাবাহিকতা দেখা যায় গত অর্থবছরেও। এ সময় রাজস্ব আয় বেড়েছে ২০ শতাংশের মতো। প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৭ শতাংশেরও বেশি। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ১৫ বিলিয়ন (১৪৯৮ কোটি) ডলার, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০১৪-১৫ অর্থবছরে, পরিমাণ ছিল ১৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে জনশক্তি রপ্তানিও আগের বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ২৩৫ কোটি ডলার বেড়ে হয়েছে তিন হাজার ৭০০ কোটি বা ৩৭ বিলিয়ন ডলার। আর সেবা খাত অন্তর্ভুক্ত করলে রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৪১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এসব কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতি এখনো ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রয়েছে। এসবই বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অগ্রগতির স্বাক্ষর।
অনেক আশা নিয়ে এ দেশের মানুষ দখলদার পাকিস্তানের হাত থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করেছিল। ৩০ লাখ তাজা প্রাণের বিনিময়ে বিজয়ও ছিনিয়ে এনেছিল। কিন্তু নানা ঘাত-প্রতিঘাতের কারণে দেশ কাক্সিক্ষত অগ্রগতি থেকে বঞ্চিত ছিল। স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় মানুষ ক্রমান্বয়ে হতাশ হয়ে পড়ছিল। আজ দেশ ক্রমেই সেই স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে চলেছে, এ দেশের মানুষের জন্য এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে! নিজস্ব অর্থায়নে আজ আমরা দেশের সবচেয়ে বড় পদ্মা সেতু করছি। যে সেতু নির্মাণ থেকে মাঝপথে সরে গিয়েছিল বিশ্বব্যাংক, সেই ব্যাংকের প্রধান নিজেই বলেছেন, বাংলাদেশ এখন তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋণগ্রহীতা দেশ। বাংলাদেশের উন্নয়নে তাঁরা আরো বেশি করে বাংলাদেশের পাশে থাকতে চান। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআইয়ের পরিমাণ ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে। রপ্তানি আয় শুধু নয়, রপ্তানি করা পণ্যের সংখ্যাও ক্রমেই বাড়ছে। স্বাধীনতার পরপর আমাদের রপ্তানির তালিকায় ২৫টি পণ্য থাকলেও মূল রপ্তানি পণ্য ছিল মাত্র তিনটি পাট, চা ও চামড়া। রপ্তানি হতো ৬৫টি দেশে। গত অর্থবছরে আমাদের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় ছিল ৭৭২ ধরনের পণ্য এবং রপ্তানি হয়েছে ১৯৯টি দেশে। ক্রমাগতভাবেই বাড়ছে রপ্তানি পণ্যের ধরন ও পরিমাণ। এমন অনেক পণ্য রপ্তানি হচ্ছে, যা কয়েক বছর আগেও ভাবা যেত না। বাংলাদেশের ওষুধ এখন উন্নত দেশগুলোতেও রপ্তানি হচ্ছে। সফটওয়্যার রপ্তানি ক্রমেই বাড়ছে। বাংলাদেশে তৈরি জাহাজও এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।
পৃথিবীতে কোনো দেশই রাতারাতি উন্নতি করেনি। এমন উন্নয়ন সম্ভবও নয়। বাংলাদেশ স্থায়ী উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে, এটাই আমাদের জন্য স্বস্তির খবর, আনন্দের খবর। আমরা চাই, উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত থাকুক। বাংলাদেশ ক্রমে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশের পথে এগিয়ে যাক।