স্পোর্টস ডেস্ক :
সেন্ট পিটার্সবার্গের ক্রেস্টোভস্কি স্টেডিয়ামে ৬৪ বছরে প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নেমেছিল সুইজারল্যান্ড। সুইডেনেরও ২৪ বছর পর সেই একই লক্ষ্য অর্জনের ম্যাচ ছিল। শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছে সুইডিসরা। ১-০ গোলে সুইজারল্যান্ডকে হারিয়ে ১৯৯৪ সালের পর এই প্রথম এবং ষষ্ঠবারের মতো শেষ আটে জায়গা করে নেয় সুইডেন। ম্যাচের প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধের ৬৬ মিনিটে সুইডেনের পক্ষে গোল করেন এমিল ফর্সবার্গ। এ পরাজয়ে আবারও দ্বিতীয় রাউন্ড না পেরোতে পারার আক্ষেপ নিয়েই রাশিয়া থেকে বিদায় নিল সুইজারল্যান্ড। বিশ্বকাপে এটি সুইডেনের ৫০তম ম্যাচ ছিল। বিশ্বের ১১তম দল হিসেবে এই কৃতিত্ব দেখায় তারা। ২৯তম বারের মতো পরস্পরের মুখোমুখি হলেও বিশ্বকাপে এবারই প্রথম দু’দলের মধ্যে ম্যাচ। সর্বশেষ ২০০২ সালের মার্চে মোকাবেলায় ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল। শেষ তিনবারের মুখোমুখিতে ১টি জয় ও ২টি ড্র আছে সুইডেনের। সুইসরা সর্বশেষবার সুইডিসদের হারিয়েছিল ১৯৯৪ সালের অক্টোবরে ইউরো বাছাইয়ে বার্নে ৪-২ গোলে। ১৯৫৮ সালে ঘরের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে রানার্সআপ হওয়াই সেরা সাফল্য সুইডেনের। এরপর তারা বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ড আর একবারই ১৯৯৪ সালে পেরোতে পেরেছিল এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিল। আর সুইজারল্যান্ড ১৯৩৪, ১৯৩৮ ও ১৯৫৪ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল। কিন্তু এরপর ৬ বার বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে কোনবারই দ্বিতীয় রাউন্ডের গন্ডি পেরোতে পারেনি। দেশের বাইরে কখনও সুইডিসরা বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচ জিততে পারেনি। ১৯৫৮ সালে দুইবার ঘটনাটি ঘটিয়েছিল ঘরের মাটিতে হওয়া বিশ্বকাপে। তাই দু’দলেরই লক্ষ্যটা ছিল কোয়ার্টারে উঠে দীর্ঘ সময়ের খরা কাটানো। সেদিক থেকে এবার বিশ্বকাপে র্যাঙ্কিং ও পারফর্মেন্স বিবেচনায় এগিয়ে থাকা সুইসরাই প্রথম থেকে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করল।
বল দখলের লড়াইয়ে শুরু থেকে সুইসরাই এগিয়ে ছিল। তবে আক্রমণে এগিয়ে ছিল সুইডেন। কারণটা প্রথম থেকেই কিছুটা অক্রমণাত্মক ৪-৪-২ ফরমেশনে শুরু করেছিল তারা আর রক্ষণাত্মক কৌশল ৪-২-৩-১ বেছে নিয়েছিল সুইজারল্যান্ড। তাই প্রথমার্ধে ৬৫ ভাগ সময় নিজেদের পায়ে বল রেখেছিল তারা। তবে সুইডিসরা বেশ সতর্ক হয়েই খেলেছে। এরপরও সুইসদের আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে একটি হলুদ কার্ড দেখেছে তারা। আক্রমণের ধারে সুইসরা এগিয়ে থাকলেও গোলের দেখাটা পায়নি। গোল করার মতো খুব ভাল সুযোগও তৈরি করতে পারেনি। সুইডেনও দুয়েকটি পাল্টা আক্রমণ করেছে। কিন্তু সেসবই ছিল নিষ্ফলা। শেষ পর্যন্ত প্রথমার্ধ গোলশূন্যভাবেই শেষ হয়। দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধার আরেকটু বাড়ে সুইডেনের। তবে সুইসরা তখনও ঝিমাচ্ছিল। ছোটখাটো কিছু আক্রমণ করলেও কোন দলই সেসব থেকে সফল হওয়ার মতো তেমন কিছু দেখাতে পারেনি। ম্যাচের ৬৬ মিনিটে এমন একটি সংঘবদ্ধ আক্রমণে টয়ভোনেনের কাছ থেকে বল পেয়ে তীব্র শট নেন সুইডেনের মিডফিল্ডার এমিল ফর্সবার্গ। সুইস গোলরক্ষক লাইনেই ছিলেন। কিন্তু তাদের ডিফেন্ডার আকানজির পায়ে বলটি লেগে দিক পরিবর্তন করে জালে জড়িয়ে যায় (১-০)। এটি বিশ্বকাপে ফর্সবার্গের প্রথম গোল। গোল হজম করার পরও সুইসদের আক্রমণের ধার বাড়েনি। একেবারে ম্যাচের শেষদিকে তারা কিছুটা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। সুইডিসদের মুহুর্মুহু আক্রমণে দিশেহারা করে তুললেও ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় গোল পরিশোধ করতে পারেনি। উল্টো ৯৪ মিনিটের সময় একটি দারুণ কাউন্টার আক্রমণে গোল করার সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছিল সুইডেনের। কিন্তু ডি বক্সের সামান্য বাইরে ফাউল করায় সরাসরি লালকার্ড দেখেন সুইজারল্যান্ডের ডিফেন্ডার মাইকেল ল্যাং। এটি চলতি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় লাল কার্ড। তবে ফ্রি-কিক থেকে গোল করতে পারেনি সুইডেন। এরপরই শেষ বাঁশি বাজলে ১-০ গোলের জয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে তারা।