দেশের ছয় জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে শনিবার সকালের মধ্যে অন্তত ৩৬ জন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় বাস উল্টে ১৬ জন এবং রংপুরে বিআরটিসির বাসে ট্রাকের ধাক্কায় ছয়জন নিহত হয়েছে। ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাস খাদে পড়ে নিহত হয়েছে দুজন। এ ছাড়া নাটোর, গোপালগঞ্জ ও সাভারের আমিনবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের এসব ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনায় আরো অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশ্বের দুর্ঘটনাপ্রবণ দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। এখানে সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন প্রাণ হারায়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই) মনে করে, গণপরিবহনের যে মান থাকার কথা, তা নেই। গণপরিবহন করপোরেট কালচার নিয়ে এগোলে, চালক ও বাস মানসম্পন্ন হলে, বাস চলাচলের জন্য স্পেশাল লেন থাকলে এ ধরনের দুর্ঘটনা হয় না। বাংলাদেশে চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নেই, মুনাফা বাড়ানোর জন্য চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানো হয়। অত্যধিক ক্লান্তি ও গাড়ি চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। আবার বেপরোয়া গতি, প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইল ফোনে কথা বলাসহ বহু অনিয়ম ঘটে রাস্তায়। যাত্রীকল্যাণ সমিতির তথ্য বলছে, বর্তমানে সারা দেশে নিবন্ধিত ৩১ লাখ যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অনিবন্ধিত, ভুয়া নম্বরধারী ও অযান্ত্রিক যান মিলে প্রায় ৫০ লাখ যানবাহন রাস্তায় চলছে; যার ৭২ শতাংশের ফিটনেস নেই। এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। অন্যদিকে সারা দেশে ৭০ লাখ চালকের মধ্যে বিআরটিএর লাইসেন্স আছে মাত্র ১৬ লাখ চালকের হাতে। লাইসেন্সহীন অদক্ষ চালকের হাতে, এমনকি অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের হাতেও গাড়ির চাবি তুলে দেওয়া হয়। ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনা, হতাহতের সংখ্যা। রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল লেগেই আছে। যাদের এসব নিয়ন্ত্রণ করার কথা তারাও যেন উদাসীন।
আমরা এমন অনিরাপদ সড়ক চাই না। প্রতিদিনের অপমৃত্যুও আমাদের কাম্য নয়। যেকোনো মূল্যে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। দক্ষ ও যোগ্য চালক ছাড়া কারো হাতে লাইসেন্স তুলে দেওয়া যাবে না। গাড়ির ফিটনেসের ব্যাপারে কোনো আপস করা যাবে না। সড়কে নজরদারি জোরদার করতে হবে। সড়কে মৃত্যুর মিছিল কমিয়ে আনতে শৃঙ্খলা ফেরানোর কোনো বিকল্প নেই। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।