ঈদের ছুটিতে ঢাকাসহ সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। খুনখারাবির একাধিক ঘটনা ঘটেছে রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন এলাকায়। রাজধানীতে একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। দায়িত্ব পালনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শৈথিল্যের কারণে এবার ঈদের ছুটির সময় খুনখারাবির ঘটনা বেশি ঘটেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যে সময় দেশের আইন-শৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সবচেয়ে বেশি সতর্ক অবস্থায় থাকার কথা, সেই সময়ই এ ধরনের ঘটনাগুলো সাধারণের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করবে। রাজধানীর খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া এলাকায় খুন হয়েছে শিশু নিনাদ, যার নাম রেখেছিলেন দেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। ঈদের দিন দুপুরে বাড়ির পাশের ফাঁকা জায়গায় দাঁড় করানো তালাবদ্ধ ভ্যান থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। যাত্রাবাড়ীতে স্বামীর মারধরের পর এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া। ঈদের ছুটির আগে বৃহস্পতিবার ভোরে সীমান্ত স্কয়ারের কাছে এক জার্মান তরুণীর ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে গেছে প্রাইভেট কার আরোহী ছিনতাইকারীরা। ঈদের ছুটির তিন দিনে পাহাড়ে জনসংহতি সমিতির তিন সদস্যকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গত রবিবার ভোরে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার একটি গজারি বন থেকে এক শিশুর গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ঈদের ছুটিতে নাটোর, নোয়াখালী, চুয়াডাঙ্গা, রাজবাড়ী, ঝালকাঠি, জামালপুর, গাজীপুর ও পঞ্চগড় জেলায় ৯ জন খুন হয়েছে। আরো তিন জেলায় তিনটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর বাড্ডায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন্ স্থানে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির খবর সবার জন্যই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে আরেকটি সাধারণ নির্বাচন যতই এগিয়ে আসবে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ততই অবনতি হতে পারে বলে অভিজ্ঞমহল থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছিল। সেই আশঙ্কাই যেন সত্যে প্রমাণিত হতে যাচ্ছে। যেকোনো নির্বাচনের সময় দেশের অভ্যন্তরে দুর্বৃত্তরা সক্রিয় হতে শুরু করে। একটি বিশেষ মহলও এ সময় তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকে। এমনিতেই দেশের অভ্যন্তরে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো নতুন করে সংগঠিত হতে শুরু করেছে। এর পাশাপাশি সন্ত্রাসীরাও শক্তি সঞ্চয় করতে শুরু করেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এখন মাদক নিয়ন্ত্রণ ও মাদক কারবারিদের দমনে বেশি মনোনিবেশ করছে। এই ফাঁকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো আবার সক্রিয় হতে চাইছে বলে ধারণা করা যেতে পারে। এ ছাড়া আমাদের দেশে ব্যক্তি ও গোষ্ঠী পর্যায়ের দ্বন্দ্বও অনেক সময় খুনখারাবির মতো ঘটনায় রূপ নেয়। কাজেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।