শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রমেই বিশ্ব রাজনৈতিক মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আসীন হয়ে আসছে। যা বাঙালী জাতির জন্য গৌরব। আনন্দ ও জাগরণের এক মহাদিগন্ত উন্মোচন করছে। বিশ্ববাসী তার নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থা রেখে চলছে, যেভাবে দেশবাসীও। বাংলাদেশ এখন বিশ্ব দরবারে রোল মডেল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশ্ব মঞ্চে শেখ হাসিনা ক্রমশ নেতৃত্বের অবস্থানকে দৃঢ়তার করে তুলছেন।
সদ্যসমাপ্ত শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি সেভেনের শীর্ষ সম্মেলনের আউটরিচ অধিবেশনে অংশ নিয়ে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছেন। সম্মেলনে শেখ হাসিনা যে সব প্রস্তাব রেখেছেন, তা বিশ্ববাসীর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্র মহাসমুদ্র ও উপসাগরের তলদেশে অবস্থিত বিভিন্ন মূল্যবান সম্পদ আহরণের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন উন্নত দেশগুলোও এক্ষেত্রে সকলের পরিচয় দিতে পারছে, তা নয়। অবশ্য এটা অনস্বীকার্য যে, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে মহাসমুদ্র ও মহাসমুদ্রের তলদেশে কী কী খনিজসম্পদ আছে, এরকম অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও বিজ্ঞানীদের অজানা। যা স্পষ্ট করে সমুদ্র সম্পদ আহরণ সহজ সাধ্য নয়। সমুদ্র দূষণ মুক্ত করা যে সঙ্গত শেখ হাসিনা সে বিষয়টিকেও সামনে এনেছেন। তাই সমুদ্র ও উপকূলীয় প্রতিবেশের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষায় বাংলাদেশের মতো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ এবং জি সেভেন দেশগুলোর মধ্যে যৌথ উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি এমনটাই স্পষ্ট করেছেন যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন ঝুঁকি মোকাবিলায় এবং সমুদ্রসম্পদ আহরণ ও সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় উল্লিখিত ঝুঁকিপূর্ণ দেশ এবং জি-সেভেন দেশগুলো যৌথভাবে উদ্যোগ নিলে সব দেশের উপকৃত হবার সম্ভাবনা বাড়ে। প্লাস্টিক বর্জ্যরে কারণে সাগর-মহাসাগরের পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে উল্লিখিত অধিবেশনে প্লাস্টিকের পরিবর্তে পাটজাতীয় প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহারে মনোযোগী না হলে পরিবেশ দূষণের কারণে বহুমুখী সমস্যা সৃষ্টি হবে বলে শেখ হাসিনা নেতৃবৃন্দকে উপলব্ধি করাতে সক্ষম হয়েছেন। কানাডায় অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপান ও জার্মানির সমন্বিত জোট জি-সেভেনে এক সময় রাশিয়া ছিল-জি-এইট হিসেবে। ২০১৪ সালে রাশিয়াকে বাদ দেয়া হয় ক্রিমিয়া অভিযানের অজুহাতে। ট্রাম্প রাশিয়াকে ফেরত আনতে চাইলেও তিনটি দেশ এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। শেখ হাসিনা সাত দেশের নেতাদের উপস্থিতিতে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের ওপর অব্যাহত চাপ প্রয়োগ ও উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসনের প্রতি ধনী দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এমনটাও বলেছেন যে, মানবিক কারণে বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিলেও দীর্ঘদিন এই উদ্বাস্তুদের লালন পালন করা দুুরূহ। তিনি মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পাদিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বাস্তবায়নে দেশটির ওপর চাপ প্রয়োগে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে জি-সেভেনের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাতে দেশগুলো সক্রিয় ভূমিকা নেবে বলে আশা করা যায়। বর্তমানে সব দেশই টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বহুমুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। জি-সেভেন সম্মেলনে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য ততটা সফল না হলেও বাংলাদেশ তার সাম্প্রতিক উদ্বেগের বিষয়গুলো তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। শেখ হাসিনা বিশ্ববাসীর কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছেন।