স্পোর্টস ডেস্ক :
অপেক্ষার প্রহর শেষ। এসে গেছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। বিশ্বকাপ ফুটবলের আলোয় উদ্ভাসিত হওয়ার সময়। সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের চোখ এখন প্রথমবারের মতো আয়োজক রাশিয়ার ওপর। বিশ্বকাঁপানো বিশ্বকাপ ফুটবলের টানটান উত্তেজনার পালা শুরু আজ রাতেই। বিশ্বের সেরা সব ফুটবল শিল্পীর নয়নাভিরাম নৈপুণ্য, ঝলক আর পায়ে-বলের আগুন ঝরানো অপার সৌন্দর্যের সার্থক প্রদর্শনী দেখার অপেক্ষায় গোটা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমী।
আজ বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় মাঠে গড়াবে ফুটবল। উদ্বোধনী দিনে স্বাগতিক রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এশিয়ার প্রতিনিধি সৌদি আরব। বাংলাদেশ থেকে এবার বিশ্বকাপের খেলা উপভোগ করা যাবে বিটিভি, মাছরাঙা টিভি ও নাগরিক টিভির পর্দায়।
৩২ দেশের এই মহারণে কোন তারকার বদৌলতে কোন দলের বৃহস্পতি তুঙ্গে এক মাসের আনন্দ-বেদনার লড়াই শেষে জানা যাবে ১৫ জুলাইয়ের ফাইনাল শেষে। গ্রেট ব্রিটেনের বিখ্যাত পপ গায়ক রবি উইলিয়মসকে দেখা যাবে আজ রাতে রাশিয়ার ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রীড়াযজ্ঞ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী মঞ্চে। মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামের আশি হাজার দর্শক ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়বে তার সুরের মূর্ছনা। রাশিয়া-সৌদি আরব ম্যাচের আগে আধ ঘণ্টার এই সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের সূচী ফিফা যেভাবে তৈরি করেছে তাতে ব্রাজিলের প্রাক্তন তারকা রোনাল্ডোই একমাত্র ফুটবলার যিনি আলোকিত করবেন অনুষ্ঠানের মঞ্চ।
বিশ্বকাপ খেলতে না পারলেও দর্শক হিসেবে বাংলাদেশের মানুষ এই উত্তেজনায় শরিক। বাড়ির ছাদে, গাছের ডালে পতপত করে উড়ছে বিশ্বকাপের সেরা দলগুলোর পতাকা। উত্তেজনা আর উন্মাদনার ঝড় বয়ে চলতে শুরু করেছে ফুটবলানুরাগীদের ঘরে ঘরে। বিশ্বকাপের রংধনুর আবিরমাখা আলোয় মেতে উঠেছে গোটা দেশ। বাংলাদেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তা যে কতটা বিস্ময়কর, সেটা বিশ্বকাপ এলেই উপলব্ধি করা যায়। কি শহর, কি গঞ্জ-গ্রাম। হাটে-মাঠে সর্বত্র বয়ে চলে বিশ্বকাপ ফুটবলের জোয়ার। দেশের জনপদ যেন তপ্ত হয়ে ওঠে বিশ্বকাপ উত্তাপে। টিভির বদৌলতে এখন নীরব গ্রামীণ জনপদের রাতও কেঁপে ওঠে ফুটবলের মিছিল-সেøাগানে। প্রিয় দলের সাফল্যে উচ্ছ্বাস আর ব্যর্থতায় দীর্ঘশ্বাস বুক নিংড়ে ঝরে পড়ে ফুটবলপ্রেমী মানুষের দেশটিতে।
চার বছর অন্তর বিশ্বকাপ শুরু হলে যে কথাটি সবার আগে সামনে চলে আসে তা হচ্ছে কে জিতবে শিরোপা? এ নিয়েই চলতে থাকে মাতামাতি। ব্যত্যয় ঘটছে না এবারও। গোটা বিশ্বেই এখন বিশ্বকাপ উত্তাপ। এবার কার নৈপুণ্যে মাতবে বিশ্ব তাই এখন দেখার। আসলে ফুটবলের বিশ্বকাপ বলে কথা। ৩২ দেশ, ৬৪ ম্যাচ, প্রতি টিমে ২৩ ফুটবলার। মোট ৭৩৬ জন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিশ্বকাপে আরও একজন তারকা থাকে। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে তার নাম ছিল ‘ব্রাজুকা’। এবার রাশিয়ায় এডিডাসের তৈরি ‘টেলস্টার ১০’Ñ বিশ্বকাপের সরকারী বল। এখানেই শেষ নয়Ñ সবকিছুর ওপরে আছে আরও এক মহানায়ক। সেটা ‘ট্রফি’। যাকে ঘিরেই এত উত্তাপ-উত্তেজনা। আসলে ফুটবল একটি সুন্দর শৈল্পিক খেলা। বিশ্বকাপ ফুটবল হচ্ছে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়োজন-যা ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ হিসেবে বিবেচিত। খেলোয়াড়দের নয়ন জুড়ানো ক্রীড়াশৈলী আর দর্শকদের আনন্দ বিশ্বকাপ ফুটবলকে করে তুলেছে দৃষ্টিনন্দন ও উপভোগ্য। জনপ্রিয়তার মানদ-েÑ অলিম্পিক গেমস থেকে শুরু করে অন্য যে কোন ক্রীড়া আসরের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষের প্রাণের খোরাক নিঃসন্দেহে বিশ্বকাপ ফুটবল। মূল পর্বের ৩২ দলকে ঘিরে আবর্তিত এ উন্মাদনা এক সার্থক সুন্দর ছবি আঁকে পৃথিবীর ক্যানভাসে। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বর্ণিল, আকর্ষণীয় এই উৎসবকে ঘিরে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ৩২টি দেশ অংশ নেয় ছন্দময় এই উন্মাদনায়। সুনির্মল বিনোদনের পরিপূর্ণ স্বাদ নেয় তারা ময়দানী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়ে। এবারও ব্যতিক্রম ঘটবে না। নিঃসন্দেহে বলা যায় ইউরোপীয় আর লাতিন ছন্দে উপভোগ্য হয়ে উঠতে বাধ্য গোটা আসর।
ফুটবলপ্রেমী পর্যটকদের ভিড়ে এখন উৎসবের নগরী মস্কো। এখানেই ৮০ হাজার দর্শক ধারনের লুঝনিকি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় স্বাগতিক রাশিয়া-সৌদি আরব ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বিশ্বকাপের শিরোপা যুদ্ধ। বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য মোট ১১টি শহর বেছে নিয়েছে রাশিয়া। সবগুলো শহরেই উৎসব-আমেজ। স্থানীয় ফুটবলপ্রেমীদের সঙ্গে ভিনদেশী দর্শক, খেলোয়াড়, কর্মকর্তাদের দীপ্ত পদচারণায় মুখরিত গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো। যেন আনন্দের ঢেউ সর্বত্র।