থেমে নেই নাশকতা। আবারও ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের আগুন লাগার পর ট্রেন থেকে ৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ৫ জানুয়ারি শুক্রবার রাত ৯টা ৫ মিনিটে ওই ট্রেনের চারটি বগিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গোপীবাগ কাঁচাবাজারে ট্রেনটি পৌঁছালে কয়েকটি বগিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর ভোরে ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনে এক নারী ও তার শিশু সন্তানসহ চারজন দগ্ধ হয়ে মারা যান। ওই ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেছিলেন, যাত্রীবেশে ট্রেনে উঠে আগুন দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা।
আমরা মনে করি, ট্রেনে আগুনের এই ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। স্মর্তব্য যে, এর আগেও ট্রেনে নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। ফলে একের পর এক নাশকতার ঘটনা ঘটছে, তা এড়ানোর যেমন সুযোগ নেই, তেমনি এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। উল্লেখ্য, ২৮ অক্টোবর থেকে ট্রেনে যানবাহনে আগুন দেওয়া হচ্ছে। আর যাই হোক, এর নাম সরকারবিরোধী নির্বাচনবিরোধী আন্দোলন হতে পারে না।
আমরা বলতে চাই, হরতাল কিংবা অবরোধ বা যে কোনো কর্মসূচিকে ঘিরে নাশকতা কাম্য হতে পারে না। দুর্বৃত্তরা এর আগেও যানবাহনে অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটিয়েছে। সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক সহিংসতার বিষয়টিও সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় এসেছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। সহিংসতা রোধে যেমন প্রত্যেক দলকে সহনশীল হতে হবে, তেমনি জরুরি রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়নও। অন্যদিকে, দুর্বৃত্তরা যেন দেশ ও মানুষের ক্ষতি করতে না পারে, নাশকতার ঘটনা ঘটাতে না পারে, সে জন্য সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা মনে করি, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের সহিংসতা রোধে যেমন এগিয়ে আসা উচিত, তেমনি নাশকতার ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য সোচ্চার হওয়া জরুরি। সহনশীলতার মধ্য দিয়ে যে কোনো সংকট মোকাবিলা হোক এমনটিও কাম্য। বলা দরকার, এর আগে এটা আলোচনায় এসেছিল যে, বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রকোপ কাটিয়ে বাংলাদেশ যখন অর্থনীতিকে চাঙা করার চেষ্টা করছিল, তখনই শুরু হয় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ- যার কঠিন প্রভাব পড়ে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর। এরপর ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধ নতুন সংকট তৈরি করে। এর প্রভাবে মধ্যপ্রাচ্যে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আর এ যুদ্ধও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে, এমন আশঙ্কাও সামনে এসেছে যে, যদি দেশের রাজনৈতিক অবস্থা অস্থিতিশীল হয়, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যদি ধারাবাহিকভাবে হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচি দেয়, তবে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবেই।
ট্রেনে আগুন এবং নিহত হওয়ার ঘটনা আমলে নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ নির্বাচনের পরেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে। রাজনৈতিক সহিংসতা নাশকতা রোধে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে। দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নতি হোক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।