সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে আজ। বাজেট উপস্থাপন করা হবে আগামী বৃহস্পতিবার। ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন বাজেটের আকার হবে চার লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো। অর্থাৎ আগের বাজেটের তুলনায় প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকা বেশি। এটি নাগরিক হিসেবে আমাদের জন্য আনন্দের সংবাদ। দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে, নাগরিক সেবা বাড়বে, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে এবং মানুষের জীবনযাত্রা সহজ হবে এমন আশা করা যেতেই পারে। কিন্তু মুদ্রার উল্টো পিঠেই রয়েছে অশনিসংকেত। ক্রমান্বয়ে বাজেট বাস্তবায়নের হার কমছে। গত অর্থবছরে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার বাজেট থাকলেও এ পর্যন্ত টেনেটুনে খরচ হয়েছে মাত্র দুই লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকার মতো। অর্থাৎ বাজেট বাস্তবায়নের হার ৮০ শতাংশের কাছাকাছি নেমে এসেছে, যা কিছুদিন আগেও ছিল ৯০ শতাংশের বেশি। বাস্তবায়নের হার এভাবে কমতে থাকলে বাজেটের আকার বাড়িয়ে লাভ কী এমন প্রশ্ন অনেকেরই।
বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নাম লিখিয়েছে। এখন উন্নয়নের ধারা আরো বেগবান করতে হবে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। অবকাঠামোর উন্নয়ন দ্রুততর করতে হবে। এ জন্য পদ্মা সেতু, মেট্রো রেলসহ গৃহীত মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। বিদ্যুতের উৎপাদন যেমন বেড়েছে, তেমনি চাহিদাও ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে। তাই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ হাবের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে। পণ্য পরিবহন সহজতর করার জন্য সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি রেলপথ ও নৌপথের উন্নয়নে নজর দিতে হবে। দেশীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে নানামুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। পুঁজির সংকট কাটাতে ব্যাংকঋণের সুদের হার কমানোসহ পুঁজির সরবরাহ বাড়াতে হবে। মানসম্মত শিক্ষা বাড়িয়ে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে হবে। জনগণের স্বাস্থ্যসেবার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। রাষ্ট্রের এই উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো সঠিকভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্যই প্রয়োজন একটি সুপরিকল্পিত, সুসমন্বিত ও বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট। আগামী বাজেটে মানুষ সেই প্রত্যাশার প্রতিফলন দেখতে চায়।
নতুন বাজেট এলেই মানুষ এক ধরনের শঙ্কার মধ্যে থাকে। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়া, করের বোঝা বেড়ে যাওয়া কিংবা সেবার দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়। বাজেট প্রণয়নে মানুষের এই আশঙ্কাগুলো বিবেচনা করা প্রয়োজন। ক্রমাগত মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা অনেক কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাই করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর দাবি উঠেছে। এটা মোটেও অযৌক্তিক নয়। অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কর আদায়ের দক্ষতা বাড়ানো গেলে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়েও বাজেটের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব। আমাদের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে পারেন। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আবারও রাখা হচ্ছে। সেই সুযোগ যেন যথাযথভাবে কাজে লাগে তার জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত ও ব্যবস্থা রাখতে হবে। আমরা চাই, আসন্ন বাজেট দেশের উন্নয়নে ও মানুষের কল্যাণে অবদান রাখুক।