মাদক বিরোধী অভিযান সফল হউক

56

মাদকের বিস্তার এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে তা নিয়ে সমাজের সচেতন অংশ চরমভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিল। যুবসমাজের একটি বড় অংশই ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল। সমাজে অস্থিরতা বাড়ছিল। মাদকের কারণে ছেলে-মেয়ের হাতে মা-বাবা খুন, ভাইয়ের হাতে ভাই খুন হওয়াসহ খুনখারাবির ঘটনা ক্রমেই বাড়ছিল। সেই সঙ্গে বাড়ছিল মাদকের অর্থ জোগাড়ের জন্য চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইয়ের মতো নানা অপরাধও। আগে মাদক আসত সীমান্ত পেরিয়ে। এখন দেশের ভেতরেই একের পর এক মাদক তৈরির কারখানা গড়ে উঠছে। ইয়াবা তৈরির বেশ কিছু কারখানা ধরাও পড়েছে। মাদক পরিবহনেও নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। বরিশালে গত বুধবার এক ব্যক্তির পেটে অস্ত্রোপচার করে এক হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। মাদকের এই বাড়বাড়ন্ত নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখির অন্ত ছিল না। এ ব্যাপারে সরকারের নিষ্ক্রিয়তারও কড়া সমালোচনা হচ্ছিল। অবশেষে গত ৪ মে থেকে সরকার মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করেছে। এ পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি। গ্রেপ্তার অভিযান চালানোর সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কোথাও কোথাও মাদক কারবারিদের প্রতিরোধের মুখে পড়েছেন। তারা পুলিশকে লক্ষ করে গুলি চালিয়েছে। পুলিশও তখন পাল্টা গুলি চালিয়েছে। এভাবে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে শতাধিক অভিযুক্ত মাদক বিক্রেতা। এরই মধ্যে কেউ কেউ মাদকবিরোধী অভিযানের নানা দিক নিয়ে সমালোচনাও শুরু করেছেন। এসব সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মাদকবিরোধী এ অভিযান মোটেও অপরিকল্পিত নয়। দীর্ঘদিন ধরে গোয়েন্দারা মাদক কারবারিদের তালিকা করেছে। সেই তালিকা ধরেই অভিযান চলছে। বড়-ছোট কোনো মাদক কারবারিকেই ছাড় দেওয়া হবে না। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকেও জানা যায়, দেশের সব গোয়েন্দা সংস্থাই মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িতদের তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং সেগুলোর ভিত্তিতে চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এখানে গডফাদার যেমন আছে, তেমনি খুচরা বিক্রেতাও আছে। এমনকি কয়েকটি থানার ওসিসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তারও নাম এসেছে এই তালিকায়, যাঁরা কোনো না কোনোভাবে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, ‘আমি যখন যেটা ধরি, ভালোভাবেই ধরি। যে যেই অবস্থানেই থাকুক না কেন, তালিকার কেউই ছাড় পাবে না।’ আমরা প্রধানমন্ত্রীর এই দৃঢ়তার প্রতি সম্পূর্ণ আস্থাশীল। আশা করছি, বর্তমান মাদকবিরোধী অভিযান সর্বাঙ্গীণ সাফল্য লাভ করবে। দেশের তরুণ সমাজ যেভাবে ধ্বংসের পথে পা বাড়িয়েছিল, তা থেকে রক্ষা পাবে। তাদের হাত ধরেই দেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।