কাজিরবাজার ডেস্ক :
পবিত্র মাহে রমজানের আজ ১৫তম দিবস। দেখতে না দেখতেই আমরা অর্ধমাস অতিক্রম করে এসেছি। এখন মাগফিরাতের দশকের মাঝামাঝিতে আমাদের অবস্থান। বাকি সময়টুকু ভালোয় ভালোয় যেন আমরা সিয়াম সাধনার কাজগুলো করে যেতে পারি। সিয়ামের সঙ্গে ইসলামের অন্যান্য ফরজ আদায়ে এ মাসে মুসলমানরা বেশ আগ্রহবোধ করেন। মাহে রমজানের শুরু থেকেই মসজিদগুলো ভরে ওঠে মুসল্লিদের কোলাহলে। মুসলমানদের দৈনন্দিন প্রধানতম ইবাদতের নাম নামাজ। এটি বাংলা উর্দু, হিন্দী ও ফার্সী ভাষায় সমানভাবে একটি ইসলামী পরিভাষা হিসেবে বহুল ব্যবহৃত। তবে এর প্রকৃত ও আরবী শব্দ হলো ‘সালাত’। সালাতের আভিধানিক অর্থ দোয়া, রহমত, ইসতিগফার ইত্যাদি। শরিয়তের পরিভাষায় নির্দিষ্ট রুকন ও যিক্রসমূহকে বিশেষ পদ্ধতিতে নির্ধারিত সময়ে আদায় করাকে সালাত (নামাজ) বলা হয়। -(কাওয়াইদুল ফিকহ, ৩৫১)
ইসলামে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে এটি অন্যতম। ইমান ছাড়া অন্য চারটি রুকনের মধ্যে এটা সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বজনীন। নামাজকে দ্বীনের খুঁটি বলা হয়েছে। খুঁটি ছাড়া যেমন ঘর হয় না তদ্রƒপ নামাজ ছাড়াও দ্বীন পরিপূর্ণ হয় না। একজন মুমিন বান্দাকে তার ইমানের প্রমাণস্বরূপ অবশ্যই প্রত্যহ পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায় করতে হবে। কুরআন মাজিদের বহু (অন্তত বিরাশি) জায়গায় নামাজ কায়েমের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও এবং যারা রুকু করে তাদের সঙ্গে রুকু কর। Ñ(সূরা বাকারা, ২:৪৩)।
যে রাতে প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (স.) এর মি’রাজ হয়েছিল এরপর দিনই আল্লাহ তায়ালা হযরত জিবরাঈল (আ.) কে তাঁর কাছে পাঠালেন নামাজের ওয়াক্ত, রাকাত ইত্যাদি সম্বন্ধে বাস্তবভাবে অবগত করার জন্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদত করবে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে, রমজানে রোজা রাখবে বায়তুল্লাহ শরিফের হজ্ব আদায় করবে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেদের সম্পদের যাকাত আদায় করবে, তা হলে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের জান্নাতে দাখিল হতে সক্ষম হবে।’ Ñ (বাদায়েউস সানায়ে ১ / ৮৯)
এভাবে নামাজ আদায়ের বহু উপকারিতা ও ফযিলত রয়েছে। যেমন: ১. আত্মিক, ২. শারীরিক, ৩. সামাজিক, ৪. পারলৌকিক ইত্যাদি। নামাজের আত্মিক উপকারিতা হল, নামাজ যেহেতু আল্লাহর প্রতি বান্দার আনুগত্যের বাস্তব রূপ ও আল্লাহর সঙ্গে মিরাজ সমতুল্য। কাজেই আল্লাহকে হাযিরÑনাযির জেনে অন্তরে আল্লাহর ভয় রেখে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যদি আল্লাহর প্রতি চরম আনুগত্যের ধ্যানসহ নামাজ আদায় করা হয় তবে এ নামাজে অবশ্যই মুসল্লির আত্মিক উন্নতি হবে। নামাজের শারীরিক উপকারিতা হলো, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হলে দৈনিক পাঁচবার উযু করতে হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। নামাজ আদায় করতে শারীরিক নড়াচড়া হয় তাও স্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণকর। তাছাড়া মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায়ের জন্য কিছু হাঁটাচলা করতে হয় তাও শরীরের জন্য খুবই উপকারী। বিশেষ করে ফজরের সময় ঘুম থেকে জেগে মসজিদে যাতায়াত করে সকালের মৃদুমন্দ বাতাস উপভোগ করা স্বাস্থ্যের জন্য বড়ই কল্যাণকর। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাও এ কথা অকুণ্ঠচিত্তে সমর্থন করেছেন। নামাজে সামাজিক উপকারিতা হলো, নামাজ আদায় মানুষকে একতা, ভ্রাতৃত্ব, নিয়মানুবর্তিতা ও কর্তব্যবোধ শিক্ষা দেয়। নিয়মিত নামাজি ব্যক্তি কখনও কর্তব্যে অবহেলা এবং অনিয়ম প্রদর্শন করতে পারে না। জামাতের নামাজে তো এ ছাড়া আরও অনেক উপকারিতা নিহিত রয়েছে।
নামাজের পারলৌকিক উপকারিতা হল, নামাজ যেহেতু আল্লাহর মহব্বত ও আনুগত্য প্রকাশের অন্যতম পন্থা, নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়, তাই নামাজ হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাতে জান্নাত লাভের অন্যতম উপায়, উসিলা। এ কারণেই ‘নামাজকে জান্নাতের চাবি’ বলা হয়েছে। আসুন, পবিত্র মাহে রমজানে আমরা সকলে নামাজের পাবন্দী হই।