কিছুকাল আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কিছু কথা বলেন। তাতে অনেকেই এমন আগাম ধারণা পেতে পারেন যে, সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানো হতে পারে। এমনটা হলে তা দেশের মধ্যবিত্ত সমাজের জন্য বিরাট ক্ষতির ব্যাপার হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার আকর্ষণীয়। এখন বাজারে ঋণের সুদের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের ঋণের ফারাকটা একটু বেশি হয়ে গেছে। তাই এটাকে রিভিউ করতে হবে। কিন্তু এর সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি যুক্ত। তাই রিভিউ করা হয়নি। তবে এবার সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই এটাকে রিভিউ করা হবে।
এখানে স্মরণযোগ্য গত মাসের শুরুর দিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেছিলেন, সরকার সুভিধাভোগীদের আশা-আকাক্সক্ষার কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পের বর্তমান সুদের হার বহাল রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।
সঞ্চয়ের সুদ কমে যাওয়া প্রত্যাশিত নয়। দেশে যথেষ্ট বিনিয়োগ না হলেই ব্যাংকিং সেক্টরে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং সেইসঙ্গে বছর-বছর আমানতের টাকায় সুদের হারের নিম্নগামিতা প্রত্যক্ষ করে আসছেন, তাদের ভীতি অমূলক নয়। সর্বোচ্চ মন্দ পরিস্থিতি বিষয়ে আগাম হতাশা প্রকাশ অবশ্য ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির লক্ষণ নয়।
সরকার সচেতন বলেই বিনিয়োগে স্থবিরতা কাটাতে বিনিয়োগ বোর্ড ও প্রাইভেটাইজেশন বোর্ডকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিনিয়োগের মাধ্যমে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ২০১৪ সালের মার্চে বিনিয়োগ বোর্ড ও প্রাইভেটাইজেশন কমিশন একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বেসরকারি বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিনিয়োগ বোর্ড কাজ করে থাকে। অন্যদিকে বন্ধ কিংবা অলাভজনক সরকারি কলকারখানা বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে উৎপাদনে নিয়ে আসার দায়িত্ব প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের।
এ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ২৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। কর্তৃপক্ষের যুক্তি ছিল : ‘সুদের হার বেশি হওয়ায় সঞ্চয়পত্রের বিক্রি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছিল। এটা চলতে থাকলে এ খাতে বিনিয়োগ আরও বেড়ে যাবে। সরকারের ভবিষ্যৎ ঋণের বোঝাও বেড়ে যাবে। সে কারণেই সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’ কিন্তু সঞ্চয়পত্র হলো স্বল্প আয়ের মানুষের নির্ভরতার জায়গা। এই আমানত তাকে নিরাপত্তা দেয়। মানুষ রাষ্ট্র তথা সরকারের কাছ থেকেই এই অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রত্যাশা করে। এই একটি খাতে সাধারণ মানুষ চোখ বন্ধ করে বিনিয়োগ করে। শেয়ারবাজারে ধস নামার বাস্তবতায় দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ প্রধানত সঞ্চয়পত্র খাতের মাধ্যমেই বিনিয়োগ করে থাকে। অবসরভোগী চাকরিজীবী, প্রবাসী ও সমাজের বিশেষ জনগোষ্ঠীর ভেতর সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের প্রবণতা বেশি। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ তার সারা জীবনের সঞ্চয়ের বড় অংশ এই খাতেই বিনিয়োগ করে থাকে ঝুঁকিহীনভাবে বেশি লাভের আশায়। আমরা বলেছিলাম খেলাপি ঋণ আদায়ের হার বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণই যুক্তিযুক্ত।