কাজিরবাজার ডেস্ক :
রহমত মাগফিরাত ও বরকতের মাস রমজানুল মুবারকের আজ ১১তম দিবস। আজ থেকে শুরু হলো মাগফিরাতের প্রতিশ্র“ত মধ্যম দশক। গত রহমতের দশকে হেলাখেলা ও ব্যস্ততায় যাদের আল্লাহর দরবারে তাঁর করুণা ভিখারী হয়ে লুটোপুটি করা সম্ভব হয়নি, এখন ক্ষমার এই দশকে মহামহিম প্রভুর কাছে, তার সন্তুষ্টির পথ পরিক্রমায় ফিরে আসা দরকার এবং অনন্ত পরকালের পাথেয় অর্জনের যে সুযোগ মাহে রমজানে এসেছে তার যেন সদ্ব্যবহার হয় সেদিকে মনোযোগী হওয়া উচিত। আমাদের রোজার হক হকুক নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে, জানতে হবে এ মাসে সিয়াম সাধনার বিধিবিধান। গোটা রমজান মাস রোজা রাখা ফরজ। রমজান যেমন রহমতের বারিধারায় সিক্ত তেমনি কোন ব্যক্তি বা কোন সমাজে এ মাসের মর্যাদাহানি হলে বা এ মাসের যথাযথ প্রয়োগ ও ব্যবহার না হলে হাদিস শরীফ মতে আল্লাহ, তাঁর মহান ফেরেশতা জিবরাঈল (আ.) ও মহানবী হুযুরে কারীমের (সা) অভিশাপ বর্ষিত হয়। তাই পারতপক্ষে কোন মুসলমানের রোজা ভাঙ্গা উচিত নয়। এরপরেও কেউ যদি কতিপয় যৌক্তিক কারণে রোজা ভঙ্গ করে ইসলামী আইনের কিতাবগুলোতে তার প্রতিবিধান দেয়া হয়েছে। যেমন রমজান মাসে রোজা রাখার পর কেউ বিনা ওযরে, ইচ্ছাকৃতভাবে তা ভঙ্গ করলে কাফ্ফারা ওয়াজিব হয়। রোজার কাফ্ফারা যিহারের কাফ্ফারার মতোই। একটি রোজার কাফ্ফারা হলো একটি গোলাম আযাদ করা। সম্ভব না হলে একাধারে ষাট দিন রোজা রাখা। তাও সম্ভব না হলে ষাটজন মিসকিনকে দুবেলা আহার করানো।
গোলাম আযাদ করতে অক্ষম হলে একাধারে ষাট দিন রোজা রাখতে হবে। ভেঙ্গে ভেঙ্গে কিছু কিছু করে রোজা রাখা জায়িয নেই। যদি ঘটনাক্রমে মাঝে দুই-একদিন বাদ পড়ে যায় তবে পুনরায় আরম্ভ করে ষাটটি পূর্ণ আদায় করতে হবে। তবে এ ষাট দিনের মধ্যে যদি কোন মহিলার নির্দিষ্ট স্ত্রীরোগ আরম্ভ হয়ে যায় তবে পূর্বের রোজাগুলোও হিসাবে ধরা হবে (শামী-২য় খন্ড)। নিফাসের কারণে যদি রোজা ভঙ্গ করতে হয় তবে পূর্বের রোজাসমূহ ধর্তব্য হবে না। নতুনভাবে পুনরায় ষাটটি রোজা রাখতে হবে (শামী)।
রোগের কারণে যদি কাফ্ফারার রোজা ভঙ্গ করতে হয় সুস্থ হওয়ার পর পুনরায় ষাটটি রোজা রাখতে হবে। যদি মাঝে রমজান মাস এসে যায় তবে রমজান মাসের পর কাফ্ফারার রোজা আদায় হবে না। নতুনভাবে আবার ষাটটি রোজা রাখতে হবে (শামী)। শরিয়ত এ কঠিন সিদ্ধান্ত দিয়েছে এজন্য যে, কোন ব্যক্তি যেন রমজান মাসে কোরআন নাযিলের এ মৌসুমে সিয়াম সাধনাকে উপেক্ষা করে নিজে কোন গোটা সমাজের বিরোধিতায় নিমগ্ন হওয়ার সাহস না পায়। এজন্য আমাদের দেশে একটি কথা আছে, ‘সময়ের একফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়’। এ সঙ্গে ইসলাম ধর্ম থেকে এ কথাটিও উপলব্ধিযোগ্য, ওয়াক্তের কাজ ওয়াক্তের মধ্যে করতে হবে। এ দর্শন দুনিয়াবী যে কোন কাজে আমরা যদি অনুসরণ করি, তাহলে অবশ্যই সফলতা অনিবার্য।
উল্লেখ্য, উপরোক্ত মাসয়ালার সঙ্গে এ বিষয়টিও জেনে রাখা দরকার, বার্ধক্য বা অসুস্থতার কারণে কেউ যদি কাফ্ফারার রোজা পুনঃআদায় করতে সক্ষম না হয় তবে প্রতিটি রোজার পরিবর্তে ষাট জন মিসকিনকে পেটভরে দুবেলা আহার করাতে হবে। এই ষাটজন মিসকিনের প্রত্যেকেই বালেগ হতে হবে। কোন নাবালিগকে কাফ্ফারার খাদ্য খাওয়ানো হলে তা হিসাবে গণ্য হবে না। এর পরিবর্তে সমসংখ্যক বালিগ মিসকিনকে খাওয়াতে হবে (শামী)। খাওয়ানোর পরিবর্তে প্রত্যেক মিসকিনকে ‘সাদাকাতুল ফিত্র’ পরিমান চাল, আটা বা এর মূল্য প্রদান করলেও কাফ্ফারা আদায় হয়ে যাবে (শামী)।
যার ওপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হয়েছে সে যদি অন্য কাউকে তার পক্ষ হতে কাফ্ফারা আদায় করার জন্য আদেশ করে এবং উক্ত ব্যক্তি তা আদায় করে দেয় তবে কাফ্ফারা আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু যার ওপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হয়েছে তার বিনা অনুমতিতে অন্য কেউ যদি তার পক্ষ থেকে কাফ্ফারা আদায় করে তবে কাফ্ফারা আদায় হবে না (শামী, ২য় খন্ড)।
একজন মিসকিনকে ষাট দিন পর্যন্ত দুবেলা আহার করালে অথবা ষাট দিন পর্যন্ত একজন মিসকিনকে ষাটবার সাদকায়ে ফিত্রের সমপরিমাণ গম বা এর মূল্য প্রদান করলে এতেও কাফ্ফারা আদায় হয়ে যাবে (হিদায়া)। একাধারে ষাট দিন আহার না করিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে আহার করালেও কাফ্ফারা আদায় হবে (মারাকিল ফালাহ)।
অবশ্য মারাত্মক শারীরিক অসুস্থতার কারণে কিংবা সফরে থাকার দরুন কেউ যদি কোন রোজা ভঙ্গ করে তাকে একটি রোজা ভাঙ্গার বিনিময়ে রমজান পরবর্তীতে নিকটতম সময়ে একটি রোজাই আদায় করে দিতে হবে। আল্লাহ পাক আমাদের মাহে রমজানের কঠিন নিগড়ে বাঁধা ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে সুস্থ জীবনে ফিরে আসার তাওফিক দান করুন।