রোহিঙ্গা শিশুদের ভবিষ্যৎ

34

জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের অবস্থা দেখতে এসেছিলেন বলিউড ও হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। গত সোমবার বাংলাদেশে এসে চার দিন রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে অনিশ্চিত জীবনে থাকা শিশুদের সঙ্গে খেলা, খুনসুটিতে মেতেছিলেন তিনি। চার দিনে উখিয়া ও টেকনাফের ১০টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং সীমান্তের কাছে রোহিঙ্গা আগমনের ট্রানজিট পয়েন্ট ঘুরে দেখেছেন তিনি। রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছেন তাদের বাস্তবতা, তাদের সংকট। এরপর ঢাকায় ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বৃহস্পতিবার ফিরে যাওয়ার আগে রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বলেছেন, একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ সব শিশুর প্রাপ্য। পৃথিবীতে নিজ কর্মের অবদান রেখে যাওয়ার মতো সুযোগ পাওয়া সব শিশুর অধিকার। কিন্তু রোহিঙ্গা শিশুরা তা থেকে বঞ্চিত। তাদের কিছুই নেই। খাদ্য নেই, বিশুদ্ধ পানি নেই, বর্ষায় মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। এর মাঝেও তারা হাসছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, গত বছরের আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর এখানে যে গভীর মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে তার নজির এই শিশুরা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঝুপড়ি ঘরে আশ্রয় নেওয়া প্রায় সাত লাখ মানুষের ৬০ শতাংশই শিশু; যাদের দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে বলে মনে করেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। এই শিশুদের জন্য কাজ করছে ইউনিসেফ; তার অংশ হিসেবেই প্রিয়াঙ্কা চোপড়া এসেছিলেন বাংলাদেশে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে সেখান থেকে ফেসবুক লাইভে রোহিঙ্গা শিশুদের সহায়তায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরে এই রোহিঙ্গা শিশুরা যে অনিশ্চিত জীবন কাটাচ্ছে, তা কোনো শিশুরই প্রাপ্য নয়। আশ্রয়কেন্দ্রে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত এই শিশুদের যতœ নেওয়া এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব। বিশ্ব সেই দায়িত্ব পালনে এগিয়ে না এলে রোহিঙ্গাদের একটি প্রজন্ম পুরোপুরি হারিয়ে যেতে পারে বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করেছেন তিনি।
ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার এই সতর্কতা উচ্চারণ ও রোহিঙ্গা শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাড়া দিতে হবে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। রোহিঙ্গাদের, বিশেষ করে শিশুদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।