সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
নগরীসহ সিলেটজুড়ে বেড়েছে হিজড়াদের উৎপাত। এর মধ্যে দক্ষিণ সুরমায় এদের উৎপাতের মাত্রাটা লাগামহীন হয়ে পড়েছে। রাস্তায় চাঁদাবাজির পাশাপাশি দক্ষিণ সুরমায় এখন বাড়ি-ঘরেও হানা দিচ্ছে হিজড়ারা। তবে এ নিয়ে মোটেও মাথাব্যথা নেই পুলিশ প্রশাসনের।
ভোক্তভোগীদের দাবী, পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেন না। উপরোক্ত হিজড়াদের পক্ষে কথা বলেন। এতে বুঝা যাচ্ছে পুলিশই হিজড়া গোষ্ঠিকে ভয় পাচ্ছেন।
জানা গেছে, নগরীর গোটাটিকর, শিববাড়ী, কিষনপুর, পৈত্যপাড়া ও পাঠানপাড়াসহ সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমা এলাকার বিভিন্ন স্থানে হিজড়াদের কবলে পড়ে প্রতিদিন সর্বসান্ত আর অপমানিত হচ্ছেন অনেকে। এছাড়া হিজড়াদের উপস্থিতি টের পেলে ভয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করেও মানুষজন তাদের কাছ থেকে রেহায় পাচ্ছেন না। এমন অবস্থায় দক্ষিণ সুরমাবাসী অতিষ্ঠ এবং কোমলমতি শিশু-কিশোরসহ সাধারণ মানুষরা এখন আতঙ্কিত।
কয়েক মাস থেকে দেখা গেছে, রাত পোহাবার পর থেকেই দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুল থেকে নিয়ে নাজিরবাজার পর্যন্ত সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ৫/৭ জন করে হিজড়ারা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে রাস্তার পাশে বসে থাকে। বিশেষ করে তেতলি সুনামগঞ্জ বাইপাসের মুখ এবং লালাবাজার ও রশিদপুর এলাকায় তাদের উৎপাত খুব বেশি। এদের টার্গেট বেশি থাকে বিয়েবাড়ি এবং বরযাত্রী বহনকারী গাড়ি। বিয়ের গাড়িবহর দেখলেই হিজড়ারা দলবেঁধে পথ আগলে রেখে বড় অংকের চাঁদা দাবি করে বসে। চাহিদামতো টাকা না দিলে হিজড়ারা চটে যায় এবং অনেক সময় অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে পরণের কাপড় খুলে ফেলে। এতে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সামনে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন বর ও বরযাত্রী নারী-পুরষরা। এমন একটি ঘটনা ঘটেছে গত শুক্রবার। ওইদিন দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারের কাছে সিলেট-ঢাকা মহাড়কে এক বরযাত্রীর গাড়িবহরকে আটকায় ৫ হিজড়া। বৃষ্টি হচ্ছিলো এই সময়। ওই বৃষ্টির সময় দৃষ্টিকটু কাপড় পরে হিজড়ারা বরের গাড়ি আটকে প্রথমে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। বরের চাচাতো ভাই তখন গাড়ি থেকে নেমে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তৎক্ষণাৎ এক হিজড়া পরণের কাপড় খুলে ফেলে এবং তাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে। উপায়ন্তর না দেখে ওই যুবক হিজড়াদের দাবীকৃত ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে বরের গাড়ি নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। এভাবেই প্রতিনিয়ত সম্মানহানির ভয়ে অসহায় হয়ে হিজড়াদের চাহিদামতো চাঁদা দিয়েই গন্তব্যে যেতে হচ্ছে বরযাত্রীদের।
এদিকে, বর্তমানে নগরীর গোটাটিকর, শিববাড়ী, কিষণপুর, পৈত্যপাড়া ও পাঠানপাড়াসহ দক্ষিণ সুরমায় বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি-ঘরে গিয়েও হানা দিচ্ছে হিজড়ারা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের দরজায় দাঁড়িয়ে ৫-১০ কেজি পর্যন্ত চাউল দাবি করে বসে তারা। কেউ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের বাচ্চাদের জিম্মি করে চাল বা টাকা আদায় করে হিজড়ারা। এতে চরম আতঙ্কে আছেন দক্ষিণ সুরমার মানুষ। এছাড়া গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে কিষণপুর হিজড়রা গিয়ে একইভাবে হানা দেয়। তখন তাদের দেখে লোকজন ঘরের দরজা বন্ধ করে রেহায় পাচ্ছেন না।
দক্ষিণ সুরমায় হিজড়াদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না স্কুলগামী শিশু, কিশোর-কিশোরী, নারী-পুরুষ কেউই। টাকা না দিলে মারমুখী হয়ে উঠে হিজড়ারা। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হিজড়ারা বিভিন্ন জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিচ্ছে জোর করে। না দিলে ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা করছে তারা। এমন ভয়ঙ্কর অবস্থায়ও পুলিশসহ আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরব কেন ভোক্তভোগীদের প্রশ্ন ?
এ বিষয়ে দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল বলেন, বিষয়টা আমাদের জানা নেই। এখন জানলাম, দেখি কী করা যায়।
ভোক্তভোগীরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাননি- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দক্ষিণ সুরমার দু’একটি কমিউনিটি সেন্টারের সামনে তাদের উৎপাত ছিলো। লোকজন অভিযোগ করায় আমরা হিজড়াদের তাড়িয়ে দিয়েছি। এখন আর তারা আসে না। আর বাকি জায়গাগুলোর কথা জানি না।
লোকজনের বাড়ি-ঘরে হিজড়াদের উৎপাতের কথা স্বীকার করে মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন জানান, এদেরকে দমন করতে হলে পুলিশের পাশাপাশি সমাজসেবা অধিদপ্তর ও সর্বস্তরের মানুষকে সহযোগীতায় এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।