সুনামগঞ্জে সৎমার বিরুদ্ধে জবানবন্দী দিল কন্যা, ধর্ষককে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ

4

সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
অবশেষে সৎমার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে ধর্ষিত কন্যা। ২৮ জুলাই বুধবার বিকেলে আমলগ্রহণকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ইসরাত জাহানের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় ধর্ষণের শিকার অসহায় এতিম মেয়েটি।
মামলার বিবরনে প্রকাশ, গত ৩ জুন বৃহস্পতিবার বেলা ২টায় সৎমা জুনু বেগম স্বামী সিরাজ মিয়াকে চায়ের সাথে নেশা পান করিয়ে তার স্কুল পড়–য়া কিশোরী কন্যাকে ফুঁসলিয়ে জোরপূর্বকভাবে সুনামগঞ্জ সদর থানার সুরমা ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর সদরগড় গ্রামের পিত্রালয় হতে সিলেটে নিয়ে যায়। ঐদিন রাত ১২টায় সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন মা আবাসিক হোটেলের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রেখে ভিকটিম সৎ কন্যাকে, পরকীয়া প্রেমিক মাহমদ আলীর দ্বারা জোরপূর্বক ধর্ষণ করায়। ভিকটিমের সৎমাতা জুনু বেগমের সাথে উক্ত ধর্ষক মাহমদ আলীর অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে।
এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন সংশোধন আইন ২০২০ এর ৭,৯ (১) ও ৩০ ধারায় আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। ইব্রাহিমপুর পশ্চিমহাটি গ্রামের আশরাফ আলীর কন্যা ও ভিকটিমের খালা বাদী হয়ে সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে, ১৯৪/২০২১নং নারী ও শিশু নির্যাতন (পিটিশন) মোকদ্দমাটি দায়ের করেন। মামলায় বিজ্ঞ আদালত তদন্তপূর্বক এফআইআরক্রমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সদর থানার পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। মামলায় ছাতক থানার কালারুখা ইউনিয়নের বোবরাপুর গ্রামের আছমত আলীর বখাটে পুত্র ৩ সন্তানের জনক মাহমদ আলী (৩৫) এবং একই গ্রামের মৃত মুসলিম আলীর কন্যা ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের পূর্ব সদরগড় ইব্রাহিমপুর গ্রামের সিরাজ মিয়ার স্ত্রী জুনু বেগম (৩৫) সহ অজ্ঞাত লোকদেরকে আসামী করা হয়।
মামলার বিবরনে জানা যায়, ভিকটিম এতিম কিশোরীর মায়ের সাথে সিরাজ মিয়ার প্রথম বিবাহ হয়। জন্মের ১ বছরের ব্যবধানে ভিকটিমের মা মারা গেলে জুনু বেগম পরকীয়া প্রেমিক সিরাজকে ব্ল্যাকমেইল করে তার স্ত্রী ও ভিকটিমের সৎমা হিসেবে ইব্রাহিমপুর সদরগড় গ্রামে শ্বশুরালয়ে আসে। অন্যদিকে মাতৃহীনা ভিকটিম কিশোরী নানা নানীর সংসারে বড় হয়। ৯ বছর বয়সের সময় নানা নানীর কাছ থেকে সিরাজ তার কন্যাকে নিজের কাছে নিয়ে যান। সৎমা জুনু বেগম ৯ বছর বয়স থেকেই ভিকটিম কে দিনের পর দিন অকথ্য নির্যাতন চালায়। এ ঘটনায় ইব্রাহিমপুর সদরগড় গ্রামে সৎমা জুনু বেগমের বিরুদ্ধে একাধিকবার সামাজিক সালিশ হয়। সর্বশেষ গত ১২ এপ্রিল সোমবার রাত ৮টায় ভিকটিমকে মারপিট করে পিত্রালয় থেকে বিতাড়িত করে দেয় জুনু বেগম। এ ঘটনায় ভিকটিমের খালা রেজিয়া বেগম বাদিনী হয়ে জুনুর গডমাদার ছাতক থানার কালারুখা ইউনিয়নের বোবরাপুর গ্রামের আছমত আলীর স্ত্রী জাহানারা বেগম ও ভিকটিমের সৎমাতা জুনু ও ভগ্নিপতি সিরাজের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের  করেন। সদর থানার এসআই মোঃ শরীফ উদ্দিনের কাছে দায়েরকৃত অভিযোগটি তদন্তাধীন থাকাবস্থায় সুনামগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীতে অধ্যয়নরত স্কুল ছাত্রী ভিকটিমকে  সিলেটে ফুঁসলিয়ে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনা ঘটায় জুনু বেগম।
বোবরাপুর গ্রামবাসী ও পরিবারের লোকজন জানান, সৎ মা ডাইনী জুনু বেগম খুব অসৎ চরিত্রহীনা, মাদক ও  নারী ব্যবসায়ী মদ্যপায়ী মহিলা। স্বামীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ১৫ দিন পরপরই পিত্রালয়ে যাওয়ার কথা বলে সিলেট শহরের বিভিন্ন হোটেলে গিয়ে দেহ ব্যবসায় লিপ্ত হয় সে। ধর্ষণকারী মাহমদের সাথেও তার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া পরিবার ও গ্রামের প্রতিবাদী লোকজনের বিরুদ্ধে থানা পুলিশে অভিযোগ দায়েরের হুমকি দিয়ে অনেকের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায়ের ঘটনায়ও জড়িত রয়েছে সে। গ্রামবাসী বলেন, ঘটনার পর থেকেই জুনু পিত্রালয়ে এসে আত্মগোপন করে। তার মা একজন ভিখারিনী। ভিক্ষুক মায়ের সংসারে থেকে ভাইয়ের স্ত্রীকে নির্যাতনসহ বোবরাপুর গ্রামে আরো অনেক অপকর্মের নেতৃত্ব দেয় এই মহিলা। ভিকটিম এতিম কিশোরীর পক্ষে বিজ্ঞ আদালতে মামলাটি পরিচালনা করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট চান মিয়া ও এডভোকেট মাসুদুল হক সর্দার সোমেল।
পুলিশ জানায়,সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলা নং ১৬ (জিআর ২০৪/২০২১) নং মামলার অন্যতম পলাতক আসামী সৎমা জুনু বেগমকে আমরা গ্রেফতার করেছি। ১৮ জুলাই রবিবার রাত ১১ টায় ছাতক থানার কালারুখা ইউনিয়নের বোবরাপুর  গ্রামে সদর থানার এসআই শরীফ উদ্দিন ও ছাতক থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকালে পলাতক আসামী জুনু বেগম কে পুলিশের হাত থেকে ছিনতাই করার চেষ্টা চালায় জুনুর ভাই হুশিয়ার আলী ও জুনুর গডমাদার জাহানারা বেগম এর পুত্রসহ আত্মীয় স্বজনরা। এ সময় পুলিশের উপর হামলাও চালায় তারা। কিন্তু শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও পুলিশ রাতের অন্ধকারে আসামীকে গ্রেফতার করে ঐ রাতেই থানায় নিয়ে আসে। পরদিন তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মোঃ সহিদুর রহমান ও ছাতক থানার ওসি মো: নাজিম উদ্দিন ধর্ষণ মামলার আসামী জুনু বেগমকে গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ধর্ষণকারীর সহযোগী জুনু বেগমকে আমরা গ্রেফতার করেছি। মূল আসামী ধর্ষক মাহমদ আলীকেও গ্রেফতারের জন্য আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।