খালেদার সাজা কেন বাড়বে না – হাইকোর্ট

40

কাজিরবাজার ডেস্ক :
এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা কেন বাড়ানো হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। বুধবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে খালেদা জিয়া ও রাষ্ট্রকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। খালেদার জিয়ার আপিল শুনানির দিন রুলের শুনানি হবে বলে আদালত জানিয়েছে।
দুদকের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন এবং মওদুদ আহমেদ।
খালেদা জিয়ার সাজা বাড়াতে গত রবিবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেছিল দুদক। মঙ্গলবার মামলাটি শুনানির জন্য আদালতে উপস্থাপন করা হলে বুধবার দিন নির্ধারণ করে আদালত। বুধবার সকালে আদালত শুনানির জন্য দুপুর দুইটায় সময় দেয়।
এই আবেদনের বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘আমাদের আবেদনের মূল যুক্তিটা ছিল এই মামলায় খালেদা জিয়া মুখ্য আসামি। প্রিন্সিপাল অ্যাকিউজড। উনাকে দেয়া হয়েছে পাঁচ বছর আর যারা সহযোগী তাদের দেওয়া হয়েছে ১০ বছর। এটা আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না।’
দুদকের এই আবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, ‘এ মামলার রায়ে খালেদা জিয়ার যে ৫ বছরের সাজা হয়েছে এতে তারা (দুদক) ক্ষুব্ধ হলেন কীভাবে? এটা তো কোনো প্রাইভেট কোম্পানি আর দুদকের মামলা নয়। এতে বোঝা যাচ্ছে তারা স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারছেন না। রাজনীতির চাপে তারা এই আবেদন ফাইল করেছে। এটা দুদকের নিজস্ব পলিসি না।’
‘আমরা আদালতে বলেছি তাদের যদি রিভিশন করতে হয় তাহলে আইন পরিবর্তন করতে হবে এবং আইন পরিবর্তন করে আসেন। না হলে এটা (রিভিশন আবেদন) তাদের প্রত্যাহার করা উচিৎ। নইলে তারা আপিল ফাইল করুক। কিন্তু এটা একটা অনিয়ম হলো।’
প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটির রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদ দেয়া হয়। এছাড়া তারেক রহমানসহ মামলার অন্য পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদ এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা অর্থদ করা হয়। রায় ঘোষণার পর খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়া হয়।
২০ ফেব্রুয়ারি কারাদে র বিরুদ্ধে আপিল করেন খালেদা জিয়া। আপিল আবেদনে বিচারিক আদালতের দ থেকে খালাস চেয়ে ৪৪টি যুক্তি দেখানো হয়। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিচারিক আদালতের দ স্থগিত চাওয়া হয়।
২২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বিচারিক আদালতের দেয়া জরিমানার আদেশও স্থগিত করা হয়। আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় জামিন চেয়ে খালেদা জিয়ার করা আবেদন ২৫ ফেব্রুয়ারি শুনানির জন্য রাখেন আদালত।
এছাড়া মামলাটিতে বিচারিক আদালতের নথি তলব করে ১৫ দিনের মধ্যে তা হাইকোর্টে পাঠাতে সংশ্লিষ্ট আদালতকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি শেষে আদালত বলেছিলেন বিচারিক আদালতের নথি আসার পর আদেশ দেবেন। ১২ মার্চ শুনানি শেষে খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেয় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ। একইসঙ্গে চার মাসের মধ্যে এ মামলার পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
১৪ মার্চ দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খানের শুনানি নিয়ে আদালত তাদের লিভ টু আপিল করতে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে ১৮ মার্চ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে দেওয়া হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত করে ওইদিন লিভ টু আপিলের শুনানির দিন ধার্য করেন।
১৮ মার্চ শুনানি শেষে আদেশের জন্য ১৯ মার্চ দিন ধার্য করেন আদালত। এদিন রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে আপিলের অনুমতি দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ। পরে হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়ে আপিল শুনানির জন্য ৮ মে দিন ধার্য করা হয়।