কাজিরবাজার ডেস্ক :
সিটি নির্বাচনে নীরব প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের প্রত্যুত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কিসের প্রতিশোধ? কে কার প্রতিশোধ নেবে?’
সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় হয়ে যাওয়া আফ্রো-এশীয় সম্মেলনের বিষয়ে রবিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
রবিবারের প্রেস কনফারেন্স খালেদা জিয়া সুলিখিত বক্তব্য পাঠ করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ খালেদা জিয়া চমৎকারভাবে মিথ্যার ফুলঝুরি ছড়িয়ে গেছেন।‘
সিটি নির্বাচনে ভোটারদের প্রতি খালেদা জিয়ার ‘প্রতিশোধের আহ্বান’ প্রসঙ্গে এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিসের প্রতিশোধের কথা বলছেন। মানুষ ভোট দেয়নি সেই প্রতিশোধ নিচ্ছেন। জানুয়ারির ৫ তারিখ থেকে আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। কত মায়ের কোল খালি হয়েছে। ৯২ দিনের হরতাল অবরোধে লঞ্চে, ভূমি অফিসে, আগুন গিয়েছে।’
সহিংসতার জন্য খালেদা জিয়াকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার নির্দেশে কত মায়ের কোল খালি হয়েছে। এখন যদি জনগণ প্রতিশোধ নেয় তবে তা কার ওপর নেবে সেটা তার ভেবে দেখা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, সহিংসতার সে সব ঘটনা আপনারাও ভুলে যেতে পারেন কিন্তু জনগণ ভুলবে না।তিনি যখনই ক্ষমতায় এসেছেন জনগণের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া মানুষ খুন করে, মানুষকে পুড়িয়ে যখন মানুষকেই প্রতিশোধ নিতে বলেন এর চেয়ে হাস্যকর আর কিছুই নেই।’
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘২০০৯ সালে আমরা সরকার গঠনের পরে যেভাবে দেশকে বিশ্বের কাছে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে গেছি, তার আগে দেশের কি অবস্থা ছিল ?
খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন যেভাবে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ভাঙচুর, ধর্ষণ হয়েছে তা নজিরবিহীন।
তার আমলে দুর্নীতির কারণে বিনিয়োগ বন্ধ ছিলো। বাংলাদেশে কেউ আসতে ভয় পেত। আমাদের হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তার ছেলে যে দুর্নীতিবাজ তা আমেরিকার ফেডারেল কোর্টের রায়ে ও সিঙ্গাপুরে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার আমলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির এমন অবস্থা হয়েছিলো যে ১/১১ এসেছিল। হাওয়া ভবনে কমিশন না দিলে ব্যবসা হয়নি। বিদেশি বিনিয়োগ চলে গেছে।
চার দলীয় সরকার মানব পাচারে জড়িত ছিলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ তারা সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে মানব পাচার করেছে। যার খেসারত দিয়েছে দেশের মানুষ।’
খালেদা জিয়া ক্রমাগত মিথ্যাচার করছেন অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ তিনি মিথ্যাচার করেই যাচ্ছেন। বিজেপি নেতা অমিত শাহ’র টেলিফোন নিয়ে, আমেরিকার ৬জন কংগ্রেসম্যানের বিবৃতি নিয়ে মিথ্যাচার তার প্রমাণ।
দেশের বিদ্যুৎ খাতে তার সরকারের অবদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি আর তার ছেলে দুর্নীতি করার জন্য বানালো খামবা লিমিটেড।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার আগে রাস্তাঘাট ছিলো ভাঙাচোরা। সেসবের উন্নয়ন করেছি। সরকারে আসার পর মানুষের পানির অভাব দূর করেছি। হাতিরঝিল, ফ্লাইওভার করেছি। তারা কি করেছে?।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কে কার প্রতিশোধ নেবে। এত মায়ের কোল খালি হলো। মায়ের সামনে বাবা-মেয়ে পুড়ে মরেছে। দেশের মানুষ প্রতিশোধ নিলে কার ওপর নেবে তা তাদের ভাবা দরকার।
সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাস পুড়িয়ে আবার ওই মার্কায় ভোট চাইছেন। ওনার লজ্জা থাকা উচিৎ ছিলো।
খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে অর্থ নিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা বলেছেন অর্থ নিয়ে ভোট দেবেন না। ক্ষমতায় থাকতে অর্থ নিয়েছেন এটা উনি ভাল বুঝেন।
বিএনপির সিটি নির্বাচনে না আসার ঘোষণা দিয়েও এখন অংশ নেয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন রাজনৈতিক নেতা যদি সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন দেশ চালাবেন কি করে! যখন ক্ষমতায় এসেছেন মানুষের জীবন বিষিয়ে তুলেছেন। তার স্বামীও বঙ্গবন্ধু ও শিশু রাসেলকে হত্যার জন্য দায়ী।
খালেদা জিয়া ভদ্রতা জানেন না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের আগে আমি ফোন করেছিলাম। আমার জীবনে এমন মুখ ঝামটা খাইনি। ছেলে মারা যাওয়ার পরে আমি গেলাম সান্ত্বনা জানাতে। কিন্তু গেটে তালা দেওয়া। পৃথিবীতে কেউ যদি মৃত বাড়িতে সান্ত্বনা জানাতে যায়, তাহলে কি গেটে তালা দেওয়া থাকে। আমি ঢুকতে পারলাম না। দলের বড় নেতারা ছিল। এটুকু ভদ্রতা কী তারা দেখাতে পারতো না। তিনি না হয় ইনজেকশন নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন, অন্তত পক্ষে বসাতেও তো পারতো। এরপর কি করে সমঝোতা করবেন।
সহিংসতায় জড়িত থাকার ব্যাপারে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না ? এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা হুকুম দিয়েছে অর্থ যোগান দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। আইন কাউকে ক্ষমা করে না। খালেদা জিয়া আন্দোলনের নামে যেভাবে মানুষ পোড়ালো আমি জানি না পৃথিবীর ইতিহাসে এমন হয়েছে কি না। ’
গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন ক্ষমতায় আসি তার আগে কোনো প্রাইভেট চ্যানেল ছিল না। আওয়ামী লীগ দিয়েছে।
তিনি এ সময় গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ২০ এপ্রিল খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে থাকা সিএসএফএর গাড়ির নিচে চাপা পড়ে সাধারণ মানুষ আহত হয়। সংবাদমাধ্যমে আমি যে উন্নয়ন করালাম সেটা গুরুত্ব পেল না। কিন্তু তিনি মানুষ খুন করলেন তার ছবি বড় বড় করে ছাপালেন। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী অস্ত্র ব্যবহার করছে কিন্তু গণমাধ্যম তা দেখায়নি। বাসে আগুন দেওয়ার সময় তো লাল কালি দিয়ে দেখাননি এটা বিএনপি নেতা, জামায়াত নেতা। কিন্তু কারওয়ান বাজার লিখলেন এটা ছাত্রলীগের, ওটা যুবলীগের।
কারওয়ান বাজারের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হরতালের কারণে যাদের ব্যবসা মন্দ হয়েছে, রাস্তায় বের হতে পারেননি। তারাই খালেদা জিয়াকে কালো পতাকা দেখিয়েছেন।
খালেদা জিয়া নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি নির্বাচনের আচরণবিধি মালা তিনি মানেননি। ১৯৩টি মোটরসাইকেল ও ৯৬টি মাইক্রোবাস নিয়ে আইন ভঙ্গ করে তিনি নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। গণমাধ্যম কেন তখন কোনো কথা বলেনি ?
দেশের সম্ভাব্য ভূমিকম্প নিয়ে সরকারের প্রস্তুতি কী এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভূমিকম্প নিয়ে আমাদের সরকারের আগে তেমন কোনো প্রস্তুতি ছিল না। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তাকে প্রশ্ন করতেন, তিনি কি করেছেন। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার আসার পরে ১৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। ভূমিকম্প হলে তারা উদ্ধার করবে। আগে ছয় তলার বেশি উপরে আগুন লাগলে তা নেভানো যেত না। আমরা কয়েকশ’ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কিনেছি। আমাদের পক্ষ থেকে যতটা করা হয়েছে, অতীতে কোনো সরকার তা করেনি।
ভূমিকম্প প্রতিরোধে দায় একার সরকারের নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধানমন্ডিতে আগে ছয়তলা করার অনুমোদন থাকলেও বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন ১৫ তলা পর্যন্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এর আগে লিখিত বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী নেপালের ভূমিকম্পের ঘটনায় গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে বলেন বাংলাদেশ নেপালের পাশে আছে। এর পর জাকার্তায় অনুষ্ঠিত আফ্রো এশীয় সম্মেলনে অংশ নিয়ে দেশের পক্ষে অর্জিত সাফল্যের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।