মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ নগরীর জনজীবন। ঘরে-বাইরে, এমনকি যানবাহনেও মশার হাত থেকে নিস্তার নেই। এগিয়ে আসছে বর্ষা মৌসুম। সে সময় যেখানে-সেখানে পানি জমে থাকবে, মশার বংশবিস্তার কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। সিটি করপোরেশনের অধিকতর সেবা কি পাচ্ছে নগরবাসী? মশার উৎপাতে সেই প্রশ্নই আবার নতুন করে উঠে এসেছে। অন্য শহরগুলোর অবস্থাও খুব ভালো নয়।
মশা নিয়ে ভয়ের কারণ শুধু কামড়ের যন্ত্রণা নয়, মশাবাহিত রোগব্যাধির ভয়ই বেশি। ডেঙ্গুতে প্রতিবছর বহু মানুষের মৃত্যু হয়। কয়েক বছর ধরে চিকুনগুনিয়ার উৎপাত রীতিমতো এক আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে। জ্বর সারলেও বহু মানুষকে বহুদিন ধরে ব্যথায় কাবু থাকতে হয়। শিশু, বয়স্ক, দুর্বল অনেক রোগীর মৃত্যুও হয়। ম্যালেরিয়া নতুন শক্তিতে ফিরে আসছে। ফাইলেরিয়া অঞ্চল বিশেষে এখনো বড় সমস্যা হয়ে আছে। আবার মশাবাহিত কিছু রোগ দুনিয়াব্যাপী নতুন নতুন আতঙ্কের কারণ হচ্ছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে ইবোলা। কে জানে কবে আবার বাংলাদেশেও ইবোলার খড়গ নেমে আসবে। তাই মশা নিয়ন্ত্রণে সারা দুনিয়াই বিশেষ তৎপরতা থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে, বিশেষ করে বড় শহরগুলোতে মশা নিয়ন্ত্রণে এত উদাসীনতা কেন? জানা যায়, এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন বা নগর কর্তৃপক্ষগুলোর লোকবল খুবই কম। ওষুধ ছিটানোর যন্ত্র কম, তারও বেশির ভাগ অকেজো। ওষুধও কার্যকর নয়। অভিযোগ আছে, ছিটানো ওষুধে মশার কিছুই হয় না। জনস্বাস্থ্য কি এসব কর্তৃপক্ষের কাছে কোনোই গুরুত্ব বহন করে না?
মশা পানি ছাড়া বংশবিস্তার করতে পারে না। নগরে মশার বংশবিস্তার বেশি হওয়ার কারণ যত্রতত্র নালা-নর্দমা, খানাখন্দে পানি জমে থাকা। টায়ার, পরিত্যক্ত পাত্র বা কৌটা, ডাবের খোসা, এমনকি পলিথিনেও পানি জমে থাকলে সেগুলোতেও মশা বংশবিস্তার করতে পারে। সে কারণেই বর্ষায় মশার উপদ্রব চরমে ওঠে। তাই বর্ষা শুরুর আগেই মশা নিধনে ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে। নগরীর ড্রেনেজব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। ময়লা-আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। নিয়মিত ওষুধ ছিটাতে হবে। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনকে যেমন উদ্যোগ নিতে হবে, তেমনি নাগরিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। পানি জমতে পারে এমন পরিত্যক্ত বস্তু বাড়ির আনাচকানাচে থাকলে সেগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। পানি জমে এমন খানাখন্দ ভরাট করে ফেলতে হবে। ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। এ কাজেও সিটি করপোরেশন নাগরিকদের সংগঠিত ও সচেতন করার উদ্যোগ নিতে পারে।