ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিন

36

দেশে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ অবৈধভাবে আমদানি করা হচ্ছে। অনেকে ড্রামে ওষুধ এনে স্থানীয়ভাবে মোড়কজাত করছে। ওষুধের দোকান তো বটেই, এমনকি নামিদামি হাসপাতালেও এসব ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে। এসব ওষুধের বেশির ভাগই জীবনরক্ষায় অপরিহার্য এবং অনেক দামি। ক্যান্সারের ওষুধও রয়েছে এসবের মধ্যে। ক্রেতাদের পক্ষে জানাও সম্ভব হচ্ছে না, ওষুধ ভেজাল বা নিম্নমানের কি না। আবার মোড়কে বিদেশে তৈরি সিল থাকায় ক্রেতারা এসব ওষুধ আগ্রহ নিয়েই কিনছে। ফল কী হচ্ছে? রোগীর মৃত্যু ত্বরান্বিত হচ্ছে। এই অবৈধ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত রয়েছে কাস্টমস, ওষুধ প্রশাসন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের বহু সিন্ডিকেট। এরা নিজের সামান্য আর্থিক লাভের জন্য বহু মানুষের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে। যেকোনো মূল্যে এদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ সেই জীবাণুকে ধ্বংস করতে পারে না। ফলে জীবাণু বিস্তার ঘটে এবং দ্রুত রোগী মারা যায়। তাই যারা ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ বাজারে বিক্রি করে, তাদের সরাসরি হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশের প্রচলিত আইনের কিছু দুর্বলতার কারণে তারা পার পেয়ে যায়। তাই দেখা যায়, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রেতারা ধরা পড়লেও খুব সহজেই ছাড়া পেয়ে যায়, বড়জোর কিছু আর্থিক জরিমানা করা হয়। কিছুদিন আগে র‌্যাবের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত অ্যাপোলো হসপিটালসের ফার্মেসি থেকে ক্যান্সারের ওষুধসহ ৩০টি আইটেমের মেয়াদোত্তীর্ণ তিন কার্টন ওষুধ জব্দ করে। এ জন্য তাদের মাত্র পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
জানা যায়, অসাধু ব্যবসায়ীরা অন্যান্য পণ্যের মধ্যে লুকিয়েও ওষুধ আমদানি করে। গত বছর ভোমরা স্থলবন্দরে পেঁয়াজের ট্রাকে করে আনা প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের ওষুধ জব্দ করা হয়েছিল। চোরাচালান হয়েও আসছে অনেক ওষুধ।
হাসপাতালে বা বাড়িতে মুমূর্ষু কোনো রোগী নিয়ে উদ্বিগ্ন কোনো সাধারণ ক্রেতার পক্ষে নকল বা ভেজাল ওষুধ চিনে ক্রয় করা প্রায় অসম্ভব। তদুপরি চিকিৎসক যদি সেই ধরনের ওষুধ লিখে দ্রুত আনতে বলেন, তাহলে তো করার কিছুই থাকে না। এ ধরনের ওষুধ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। নিষিদ্ধ, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রেসক্রিপশন করা থেকে শুরু করে বিপণন পর্যন্ত যাদেরই সংশ্লিষ্টতা থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। এগুলো আমদানি বা পুনরুৎপাদনের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে। আমরা আশা করি, জনস্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি সৃষ্টিকারী যেকোনো অপচেষ্টা রুখতে সরকার সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেখাবে।