কাজিরবাজার ডেস্ক :
রেলপথে আরামদায়ক যাত্রীসেবা ও পরিবহনে সক্ষমতা বাড়াতে ১০০টি ক্যারেজ মেরামতের (পুনর্বাসন) উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০২০ সালে। এরই মধ্যে কেটে গেছে প্রায় দুই বছর। প্রকল্পের আওতায় ব্যয়ও হয়েছে ৮ কোটি ৪৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা। কিন্তু কাজে ধীরগতিতে দেখা দিয়েছে বিপত্তি। ক্যারেজ পুনর্বাসনের জন্য ডিপিপিভুক্ত (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) অধিকাংশ মালামালের বর্তমান বাজারমূল্য বেশি। কোচ মেরামতে আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করা হলেও কোনো ঠিকাদার এতে অংশ নেয়নি। এতে কোচ মেরামতে দেখা দিয়েছে জটিলতা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের ১০০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (কারখানা-পাহাড়তলী) তাপস কুমার দাশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ণ্ডবলেন, মালামালের বর্তমান বাজারদর যাচাইয়ে কমিটি করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর বলা যাবে মূল্য বাড়বে কি না।
প্রকল্পের মেয়াদ কি বাড়বে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা এখন বলা যাচ্ছে না।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রীবাহী কোচের মেরামত ব্যাকলগ দূর করা, প্রাপ্যতা বাড়ানো, যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন ও রেলওয়ের রাজস্ব আয় বাড়ানো জরুরি। এ লক্ষ্যেই ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের ১০০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৭৪ কোটি ১১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। মেয়াদ ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। ২০২১ সালের জুন নাগাদ আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, যা অনুমোদিত ডিপিপির মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে জানুয়ারি পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৭ কোটি ৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত মোট আর্থিক অগ্রগতি ৮ কোটি ৪৩ লাখ ৩২ হাজার, যা অনুমোদিত ডিপিপির মাত্র ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ১৫ শতাংশ। ফলে প্রকল্পের আওতায় ৮ কোটি ৪৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা ব্যয় হলেও ক্যারেজ মেরামতের জন্য কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মিলছে না।
জানা যায়, করোনায় লকডাউন থাকায় ক্রয় প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়। এতে মালামাল সংগ্রহ ও যথাসময়ে সরবরাহ করতে না পারায় প্রকল্পের অগ্রগতি বিলম্বিত হয়েছে। ডিপিপিতে প্রকল্পের প্রাক্কলিত মূল্য ২০১৮ সালের বাজারদরের ভিত্তিতে ধরা হয়েছিল। এখন ২০২২ সাল। ফলে রেট শিডিউলের পরিবর্তন হয়েছে। বেঁধে দেওয়া দামে মিলছে না কোচ মেরামতের মালামাল। অন্যদিকে বৈদ্যুতিক বিভাগের মালামালের স্পেসিফিকেশনে পরিবর্তন আনায় মালামাল সংগ্রহে বিলম্ব হচ্ছে। এসব কারণে প্রকল্পটি সংশোধন করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পে প্যাকেজ সংখ্যা অনেক বেশি। একই ধরনের মালামালের জন্য একাধিক প্যাকেজ থাকায় তা সংগ্রহের জন্য ইজিপিতে টেন্ডার আহ্বান করে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি করা যেতে পারে।
প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের সিদ্ধান্ত
বাজারদর কমিটির মাধ্যমে বর্তমান বাজারমূল্যের ওপর ভিত্তি করে দাপ্তরিক প্রাক্কলন পুনঃনির্ধারণ ও ক্রয়প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে। ক্রয়কারী কার্যালয় প্রধান বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অনুমোদনক্রমে ডিপিপিতে প্যাকেজের ক্রয় পদ্ধতি, পরিমাণ, প্যাকেজ, লট ও প্রাক্কলিত ব্যয় ঠিক করতে হবে।
প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার কারণ
বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে বর্তমানে ৯০৭টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী কোচ/ক্যারেজ এবং প্রায় ২ হাজার ৫৩০টি ওয়াগন আছে। এই ক্যারেজ ও ওয়াগনগুলো মেরামতসহ যে কোনো কাজের জন্য একমাত্র জায়গা পাহাড়তলী ক্যারেজ ও ওয়াগান কারখানা। এই কারখানায় ২ হাজার ১২৬ জনবলের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত ১ হাজার ১০০ জন, যা প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক। আবার ক্যারেজ ও ওয়াগনগুলোর প্রায় ৫০ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের বেশি। এসব ক্যারেজ ব্যবহার উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় মেরামত কাজে সময় ও অর্থ দুটিই বেশি লাগে। কিন্তু পাহাড়তলী কারখানায় জনবলের স্বল্পতা ও বাড়তি অর্থের সংস্থান না থাকার কারণে বেশি মেরামত প্রয়োজন হওয়া গাড়িগুলোর কাজ পড়ে থাকে। এতে ভারী গাড়িগুলোর কাজ জমে ব্যাকলগ তৈরি হয়েছে।
এদিকে রেলপথে যাত্রীর চাপ মোকাবিলা করতে মেরামত ছাড়াই চারশ ভারী মিটারগেজ ক্যারেজ বা কোচ চলাচল করছে। এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যাত্রী চাহিদার কারণে ওভারডিউ এসব কোচ রেলবহর থেকে বাদও দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকিও থেকে যাচ্ছে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয় দুই বছর আগে।