রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্যোগ

29

মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে নিয়ে বাংলাদেশ এক কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। নিকট ভবিষ্যতে এই চ্যালেঞ্জ আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলেই নানা মহল থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডাব্লিউএফপি) নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিজলির বক্তব্যেও তেমন আশঙ্কার কথাই উঠে এসেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনায় তিনি জানিয়েছেন, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা রোহিঙ্গাদের প্রয়োজন মেটাতে কাজ করে যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে দাতাদের আগ্রহ ক্রমেই কমছে। তাঁর এই বক্তব্য থেকে ধারণা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে তাদের ভরণ-পোষণের দায় মূলত বাংলাদেশকেই নিতে হবে। দুই দেশের মধ্যে প্রত্যাবাসন চুক্তি হলেও কবে নাগাদ সেই প্রক্রিয়া শুরু হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। প্রস্তুতির নামে মিয়ানমার যে ক্রমাগত সময়ক্ষেপণের চেষ্টা করতে পারে, তেমন আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। আবার মিয়ানমারের পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মতো না হলে বা নিরাপদ না হলে রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরে যেতেও চাইবে না। সে ক্ষেত্রে তাদের জোর করেও পাঠানো যাবে না। সব দিক বিবেচনায় এ সংকট সহজে কাটবে বলে মনে হয় না। তাই বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতির কথা ভাবতেই হবে।
ক্রমেই এগিয়ে আসছে বর্ষাকাল। পাহাড়গুলো ন্যাড়া করে যে অসংখ্য খুপরিঘর বানানো হয়েছে, সেগুলো পাহাড়ধসের শিকার হতে পারে। আবার নিচু জমিতে স্থাপিত খুপরিঘরগুলো বন্যায় ডুবে যেতে পারে। কয়েক লাখ রোহিঙ্গা আবারও আশ্রয় সংকটে পড়তে পারে। তখন দেশের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা বেড়ে যেতে পারে। বর্ষায় তাদের স্বাস্থ্যসেবার সংকট আরো প্রবল হতে পারে। অবৈধ পথে বাংলাদেশের পাসপোর্ট সংগ্রহের ঘটনাও ঘটছে। তাদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও সংকট ক্রমে বাড়তে পারে। এ রকম অবস্থায় প্রত্যাবাসন দ্রুততর করার কোনো বিকল্প নেই। প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে মিয়ানমারকেই। সেখানে নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকারগুলোর নিশ্চয়তা দিতে হবে। সম্মানজনক পুনর্বাসনে জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে এখনো মিয়ানমার সরকারের আগ্রহের যথেষ্ট ঘাটতি আছে বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই যথাযথ প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আরো বাড়ানো জরুরি। আমরা মনে করি, বিশ্বসম্প্রদায় সেভাবেই এই সংকট মোকাবেলায় উদ্যোগী হবে।